ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় ইসরাইলের সমর্থন, আরব-ইউরোপের বিরোধিতা

উত্তর আমেরিকা , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মতে গাজা উপত্যকা নিয়ে অসাধারণ পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুত রাখছেন আরব আমেরিকান ও মুসলিম নেতারা। অন্যদিকে, দ্বিরাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই সমাধান চেয়েছেন পুতিন। গাজা নিয়ে হঠকারী প্রস্তাবের দায়ে ট্রাম্পকে অভিশংসনের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা। ইসরাইলি জরিপ বলছে, ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে উপত্যকাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। ফিলিস্তিনিদের অন্য আরব রাষ্ট্রে সরিয়ে গাজার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রস্তাবও দেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরির আশ্বাসও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, এটি সত্যিই অনুকরণীয় প্রস্তাব, এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রস্তাবে মূলত যারা স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়তে চায় কেবল তাদেরই স্থানান্তর করা হবে। তাদের সম্মতিতে এই প্রক্রিয়া চালানো হবে। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার কিছু নেই। বাসিন্দারা ফিরেও আসতে পারবে। তবে এর আগে গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন প্রয়োজন। আর এ কারণেই গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে।’

যদিও ট্রাম্পের প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বহু আরব ও ইউরোপীয় রাষ্ট্র। দ্বি-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যেকোনো ধরনের জাতিগত নির্মূলের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। সংস্থাটিতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, গাজা উপত্যকা কারও দখলের জন্য মুক্ত কোনো ভূমি না।

এদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুত রাখছেন আরব আমেরিকান ও মুসলিম নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের ভাবনা কোনো দিক দিয়েই যুক্তিসংগত নয় বলেও মত তাদের।

কাউন্সিল অব ইসলামিক রিলেশনসের পরিচালক আহমেদ রেহাব বলেন, ‘অনেকেই ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখল করা উচিত। যদিও, এই ধারণাটি আন্তর্জাতিক আইন, সাধারণ জ্ঞান, নৈতিকতা, সবদিক থেকে অযৌক্তিক এবং অদ্ভুত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখে সবই আবাসন ব্যবসার মতো। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনি কমিউনিটি নেটওয়ার্ক সংগঠক হুসাম মারাজদা বলেন, ‘সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। এটি শুধু কথার কথা না। বাইডেনের আমলেও আমরা ইসরাইলের ভয়াবহতা দেখেছি। আর তাই, ট্রাম্পের মতো ব্যক্তির কাছে ভালো কিছু আশা করা ভুল হবে।’

গাজা নিয়ে ট্রাম্প হঠকারী পরিকল্পনা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন টেক্সাসের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান আল গ্রিন। ট্রাম্পকে অভিশংসনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান আল গ্রিন বলেন, ‘গাজায় জাতিগত নির্মূল কোনো রসিকতা নয়। বিশেষ করে যখন এটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে আসে। এই প্রস্তাবের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লজ্জা হওয়া উচিত। জাতিগত নির্মূল মানবতাবিরোধী অপরাধ। এমন জঘন্য কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসনের আওতায় আনতে হবে।’

এদিকে ইসরাইলিদের এক জরিপের তথ্য বলছে, তাদের ৭২ শতাংশ নাগরিক ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। মাত্র ১৭ শতাংশ গাজাবাসীর স্থানান্তরের বিষয়ের রাজি না।

এএম