সুযোগ পেলে অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় দুই ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমাতে পারবেন বলে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টেসলা সিইও ও ধনকুবের ইলন মাস্ক। মাস্কের ওপর আস্থা রেখে তাকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ দপ্তরের উপদেষ্টা পদেও মনোনীত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ এই দপ্তরে আরও যুক্ত করা হয়েছে আরেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাসুয়ামিকেও।
ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার মোট ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ইলন মাস্ক প্রস্তাবিত এই দুই ট্রিলিয়ন ডলার কাটছাঁট করা গেলে, জাতীয় ব্যয়ের ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোভিডের পর বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ অফিস কালচার। এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক দপ্তরে এমন অনেক কর্মী আছেন যারা বাসা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দাপ্তরিক কাজ সামলাচ্ছেন।
বার্তাসংস্থা সিএনএন বলছে, শুরুতে এসব রিমোট ওয়ার্কারদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদের ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেবেন মাস্ক ও রামাসুয়ামি। এরইমধ্যে এমন একটি তালিকা জোগাড় করেছে 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির এই দুই সম্ভাব্য উপদেষ্টা।
গেল বুধবার (২০ নভেম্বর) দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি সম্পাদকীয় লিখেছেন ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাসুয়ামি। সেখানে তারা দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাহী ক্ষমতা দখলের যে অপসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে তা বন্ধ করা হবে।
এছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি সপ্তাহে পাঁচ দিন সশরীরে অফিসে আসতে না পারেন, তাকে ছাড়াই সে দপ্তরের কার্যক্রম চলবে বলেও মন্তব্য করেন এই দুই রিপাবলিকান। দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যাদের বেতন হয়, তারা ঘরে বসে অফিস করবেন এটা মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানানো হয়েছে ঐ প্রতিবেদনে।
বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, পাঁচ দিন অফিস সব কর্মকর্তাদের জন্য বাধ্যতামূলক না। প্রতিটি দপ্তর নিজস্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এই নিয়ম ঠিক করে থাকে। অফিস অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্টের তথ্য বলছে, ভার্চুয়ালি অফিস করেন এমন সরকারি কর্মীর সংখ্যা ১৩ লাখের কাছাকাছি।
আর মোট কর্মঘণ্টার ৬০ শতাংশ সময়ে কর্মীরা সশরীরে অফিসে উপস্থিত থাকেন। তবে, মাস্ক-রামাসুয়ামির এই পরিকল্পনা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, চাকরির নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে তা অবিবেচকের মত কাজ হবে।
নির্বাহী বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে ইলন মাস্কের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বরাবরই অনিয়ন্ত্রিত জীবন কাটিয়েছেন। তাকে কাজের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি হয়তো তা প্রত্যাখান করবেন না। তবে কাজটা শেখা মাস্কের জন্য সহজ হবে না। কাজ করতে গিয়ে তিনি বুঝবেন তার প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন, এবং তাকে সাংবিধানিক ইস্যু, প্রচলিত আইন ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়বে হতে পারে। নির্বাহী বিভাগের কোথায় কত অর্থ খরচ হচ্ছে- সেটা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি কোন খাতে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে কোথায় খরচ বাড়াতে হবে, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।’
মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, যারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নানা প্রশাসনিক কাজ সামলান তাদের অন্য কোনো কাজের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি ছাঁটাই নীতিতে অবতীর্ণ হলে জনরোষের পড়তে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। আর অনভিজ্ঞ কোনো রিপাবলিকান নেতা, ফেডারেল কর্মকর্তাদের পেছনে পড়লে তা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বুমেরাং হয়ে আসতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।