আর ৭৩ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বাইডেন প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের হেভিওয়েট কর্মকর্তাদের রদবদলের বাতাস বইতে শুরু করেছে হোয়াইট হাউজ চত্বরে। যদিও হোয়াইট হাউজ বলছে, ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখতে চায় বাইডেন প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র কারিন জ্যঁ পিয়ের বলেন, বর্তমান সরকার আলোচনার দুয়ার খোলা রাখবে। তিনি আরো জানান, এই মুহূর্তে হ্যারিকেনে ক্ষতিগ্রস্তদের দাঁড়ানো ছাড়া, চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট বা এনডিএএ, বিল পাশের গুরুত্ব দেবে বাইডেন প্রশাসন। এই বিলের আওতায় বেইজিং সাথে টক্কর দিতে সেনা সক্ষমতা বাড়াতে অর্থ বিনিয়োগের লাইসেন্স পাবে ওয়াশিংটন।
তবে প্রশাসনিক রদবদলে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রতিরক্ষা বিভাগ। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে পেন্টাগন প্রধানকে অপসারণ করবেন-এমন গুঞ্জনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান লয়েড অস্টিন বলেন, ‘গেল ৪ বছরে ন্যাটোর সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় কংগ্রেসের সমর্থন থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ‘নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিশেষ ক্ষমতাবলে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেবেন বা কাউকে অপসারণ করবেন এটা খুব স্বাভাবিক। সবাই বিষয়টি জানে এবং বোঝেও। কাজেই প্রেসিডেন্ট কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
প্রতিরক্ষার চেয়েও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর আগ্রহের কমতি নেই। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বরাত দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিয়েভের জয় নিশ্চিতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করতে চায় বর্তমান প্রশাসন। তিনি আরো বলেন, ’লেবানন ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হবে।’
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে বেশ কিছু জটিল বিষয়ে অগ্রগতির ব্যাপারে ভাবছে ওয়াশিংটন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি শত্রুমুক্ত করতে চীনের সাথে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভারসাম্যও বজায় রাখা হবে। এছাড়া, ইউক্রেনের বিজয় নিশ্চিত করা এবং গাজা ও লেবাননে চলমান সংঘাত বন্ধে গুরুত্ব দেয়া হবে। মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।’
এদিকে, হোয়াইট হাউজে ক্ষমতার পালাবদলের রেশ পড়েছে ইউরোপেও। বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান পলিটিক্যাল কমিটির বৈঠকের পর হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তার ভার ইউরোপীয় দেশগুলোকেই নিতে হবে। বিশেষ করে, ইউরোপিয়ানদের শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন এই নেতা।’
জানুয়ারির ২০ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজের মসনদে বসবেন ট্রাম্প। নিজের আধিপত্য ধরে রেখেই সাজাবেন কেবিনেট, পাল্টে দেবেন আগামী ৪ বছরের হিসাব নিকাশ। তবে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন ট্রাম্প নাকি আবারও কথার ফুলঝুরিতে প্রতিদিনই জায়গা করে নেবেন সংবাদ শিরোনামে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ৭৩ দিন।