উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দিয়ে আবারো মুখোমুখি ট্রাম্প-কামালা

আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকা ফেডারেল ঋণের বোঝা কমাতে রিপাবলিকানদের নীতি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্লুমবার্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তার বাণিজ্য নীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রস্তাবনা ফেডারেল সরকারের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াবে ডেমোক্র্যাটদের এমন অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আর রেডিও'র জনপ্রিয় উপস্থাপক সারলামেন দেয়া সাক্ষাৎকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করাই হবে তার প্রধান লক্ষ্য।

নির্বাচনী প্রচারণায় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে যে পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে সমালোচনায় ঝড় বইছে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। বাজেট বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ফেডারেল সরকারের ঋণ ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা দেশের মোট জিডিপির ১৫০ শতাংশেরও বেশি।

ইলিনয়ের শিকাগোতে ব্লুমবার্গে (১৫অক্টোবর, মঙ্গলবার) বিশেষ সাক্ষাৎকারে অর্থনীতি নিয়ে একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ফেডারেল ঋণ ট্রাম্প নীতির তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসবে সেখান কেন ভোটাররা ট্রাম্পকে বেছে নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ডেমোক্র্যাটরা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টির চেয়ে ঋণ কমানো নিয়ে মাথা ঘামাতে চায়।

রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমরা সবসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা ভাবি। কামালার পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির বিষয়টি নেই। আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি। এখানে আসার সময়ও দেখলাম, এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান, স্টিল মিল, ফ্যাক্টরি ফাঁকা পড়ে আছে। কয়েকটি কারখানা পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এগুলোকে নতুন করে চালু করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।'

চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, 'আবার নির্বাচিত হলে এমনভাবে গাড়ির শুল্ক বাড়াবেন যাতে চীনের একটি গাড়িও আমেরিকায় বিক্রি না হয়। মেক্সিকো বা চীনের সাথে আপোষ করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন ট্রাম্প।'

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই জোর দিচ্ছেন তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ওপর। মিশিগানের ডিট্রয়েটে জনপ্রিয় উপস্থাপক 'সারলামেন থা গড'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে, সম্ভাবনাময় অর্থনীতি ও ডেমোক্র্যাটদের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল হ্যারিস। বিশেষ করে গৃহঋণ দেয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।

ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, 'আমার পরিকল্পনার বড় একটি অংশ সম্ভাবনাময় একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। এরমধ্যে গৃহঋণ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। প্রথম বার বাড়ি কিনছেন এমন নাগরিকদের আমরা ২৫ হাজার ডলার সহায়তা দিতে চাই। এছাড়া, যারা ব্যবসা শুরু করতে চান, ট্যাক্স কোড অনুসারে তাদেরকে মাত্র ৫ হাজার ডলার ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে এটা খুবই সামান্য অর্থ। উদ্যোক্তাদেরকে আমি ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত সহায়তা দেয়ার কথা ভাবছি।'

এদিকে ফিলাডেলফিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ও টিম ওয়ালজের জন্য আলাদা একটি প্রচারে অংশ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় ট্রাম্পকে ভীতু ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে কৌতুক করেন তিনি। বাইডেন আরও বলেন, কামালা হ্যারিস তার রাস্তা নিজেই তৈরি করতে জানেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই তাদের নিজেদের পথ নিজেরাই তৈরি করেন। আমিও তাই করেছি। আমি বারাক ওবামার বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নিজের রাস্থা নিজেকেই বানাতে হয়েছে। কামালাও তাই করবেন। এখনও পর্যন্ত তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও বিশ্বাস আছে।'

ইলিনয়, মিশিগান, ফিলাডেলফিয়ায় দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তখন রেকর্ড সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়ছে জর্জিয়ার আগাম ভোটে।

ভোটারদের মধ্যে একজন জানান, আমি মনে করি এই নির্বাচন অস্বিত্বের লড়াই। এর প্রভাব আমার সন্তান ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপরেও পড়বে। জনগনের রায় এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। রাজনীতি যেন কখনই আমাদের নাগরিক চাওয়া পাওয়াকে ধামাচাপা দিতে না পারে সেটা মাথায় রাখা উচিত।

জর্জিয়ায় আগাম ভোটের প্রথম ধাপেই জমা পড়েছে প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। ব্যাটেল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যটিতে নিবন্ধিত ভোটার ৮২ লাখ। ২০২০ সালে জর্জিয়ায় মাত্র ১১ হাজার ৭৭৯ ভোটের ব্যবধানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জয় পেয়েছিলেন জো বাইডেন। জর্জিয়ার পর আগামী বৃহস্পতিবার নর্থ ক্যারোলাইনায় শুরু হবে আগাম ভোট।