উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

যুক্তরাষ্ট্রে হেলেনের তাণ্ডবে প্রাণহানি বেড়ে ৪৩

হ্যারিকেন হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ জনে। এরমধ্যে শুধু জর্জিয়ায় নিহত হয়েছেন ১৫ জন। ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ার পর শুক্রবার নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনা এবং টেনেসিতে আঘাত হানে ক্যাটাগরি দুই মাত্রার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়টি। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন পার করছেন অন্তত ৪০ লাখ বাসিন্দা। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। জর্জিয়া ও ক্যারোলাইনায় চলছে উদ্ধার অভিযান। বন্যার্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা। এছাড়া, ফ্লোরিডার বেশ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে দুর্যোগ পরবর্তী সংস্কার কার্যক্রম।

জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে ফ্লোরিডার স্টাইনহ্যাচি শহরে বাড়ি করেছিলেন সেইলর দম্পতি। সমুদ্রে কাছাকাছি সংসার পাতার সেই স্বপ্ন ভেসে গেছে প্রলয়ংকরী ঝড় হেলেনের তাণ্ডবে। বন্যায় ভেসে যাওয়া বাড়িটির মালিক টেড সেইলর বলেন, জীবদ্দশায় এমন দুর্যোগ দেখেনি ফ্লোরিডাবাসী।

তারা জানান, 'এরচেয়ে ভয়াবহ ঝড় দেখিনি। নিজেকে আগে এত অসহায় লাগেনি। আমার বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এখানে আরেকটি বাড়ি আছে আমার, সেটাও ডুবেছে। ওনাদের পার্কিং-এ স্টিল দিয়ে একটা ছাউনি বানানো হয়েছিল সেটাও ভেঙে পড়েছে। এই ট্রাক ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই নেই'।

ভুক্তভোগী স্থানীয় আরও একজন বলেন 'আমার বয়স ৯৫। এরচেয়ে ভয়ংকর আর কিছুই হতে পারে না। আমার দাদীও এখানে থাকতেন। তিনি গল্প করতেন, ১৯৩৫ সালে এখানে খুব বড় ঝড় হয়েছিল। তখনও আমাদের বাড়িতে পানি ঢোকে নি।'

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) হেলেনের তাণ্ডবে ফ্লোরিডার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে স্টাইনহ্যাচি অন্যতম। মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ফ্লোরিডা উপকূলে হ্যারিকেন আছড়ে পড়ার সময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল আট থেকে দশ ফুট। অস্থায়ী বহু বাড়িঘর ঝড়ের তোড়ে উড়ে যেতে দেখেছেন বাসিন্দারা।

ফ্লোরিডা থেকে ক্রমশ উত্তরে সরে যেতে থাকে হারিকেন হেলেন। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বেলা ১১ টায় জর্জিয়ায় আঘাত হানার আগে শক্তি হারালেও ৬ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় ক্যাটাগরি ২ মাত্রার ঝড়টি। এরপর টেনেসির দিকে অগ্রসর হয় ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার বেগে। পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পূর্বাঞ্চলীয় নিউপোর্ট শহরের ডাউনটাউন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় টেনেসি, নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তিন লাখেরও বেশি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, নর্থ ক্যারোলাইনার মাউন্টেইন আইল্যান্ড লেক এলাকায় জারি করা হয়েছে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা। বাঁধ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ডিউক এনার্জি প্লান্ট কর্তৃপক্ষ। এতে করে যে কোনো সময় লোকালয়ে পানি ঢুকতে পারে এমন আশঙ্কায় আইল্যান্ড লেক থেকে সরে যেতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।

তবে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলের পর থেকে হেলেনের শক্তি কমতে শুরু করেছে বলে আশ্বস্ত করেছে ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার। টেনেসিতে আঘাত হানার পর ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটারে নেমে আসায় ক্ষয়ক্ষতি কমতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

হেলেনের প্রভাব কাটতে শুরু করায় উদ্ধার অভিযান জোরদার করেছে ফ্লোরিডার স্থানীয় প্রশাসন। ট্যাম্পা শহরের জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান এক্স বার্তায় দাবি করেছেন, বন্যায় সড়কপথ ডুবে গেলেও হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে মার্কিন নৌ ও সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা। এখন পর্যন্ত টাম্পা থেকে ৭৮ জন ও পাসকো কাউন্টি থেকে ৬৫ জন বন্যার্তকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করছে কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়।