রাজনীতি , উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

নির্বাচনী বিতর্কে যুক্তিতে এগিয়ে কামালা, হাস্যকর দাবি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প-কামালা হ্যারিসের প্রথম বিতর্ককে ‘জ্বালাময়ী’ বলে ব্যাখ্যা করছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। একশ মিনিটের বিতর্কে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন কামালা। আর ভালো কিছু করতে চাইলে সাড়ে ৩ বছরে কেন করেননি বলে কামালাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ট্রাম্প। অর্থনীতি, অভিবাসী সংকট, গর্ভপাত, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়ান দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এটি তৃতীয় নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে বিতর্ক সপ্তম। বিপরীতে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক। ট্রাম্পের তুলনায় নির্বাচনী দৌড়ে নবীন হলেও বিতর্কের মঞ্চে যুক্তির পাল্লা ভারী ছিল কামালারই।

এবিসি নিউজের আয়োজনে ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রথম মুখোমুখি হন দুই নেতা। চিরাচরিত সৌজন্যের অংশ হিসেবে হাত মিলিয়ে শুরু করেন বিতর্ক, তারপরই জড়ান কঠিন যুক্তিতর্কে।

অর্থনীতি নিয়ে প্রথম প্রশ্নের জবাবে কর কমানো, বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা। অভিযোগ করেন চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে বিক্রি করে দিয়েছেন ট্রাম্প। জবাবে ক্ষমতায় ফিরলে বাইরের দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কোনো বিক্রয় শুল্ক যোগ করিনি। এটা অসত্য। তিনি জানেন সেটা। আমরা ভিনদেশিদের ওপর শুল্ক যোগ করবো যেন অন্তত ৭৫ বছর পরে হলেও বিশ্ববাসীর জন্য আমরা যা করেছি, সে ঋণ শোধ করে সে দেশগুলো। কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট শুল্ক আরোপ করা হবে। চীনের কাছ থেকেও আমি লাখ-কোটি ডলারের শুল্ক সংগ্রহ করেছি।’

কামালা বলেন, ‘মহামন্দার পর সর্বোচ্চ বেকারত্ব আমাদের জন্য ছেড়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একশ' বছরের সবচেয়ে ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাত, মহামারি, গৃহযুদ্ধের পর আমাদের গণতন্ত্রের ওপর ভয়াবহতম আঘাত তিনি রেখে গেছেন। আমরা আসার পর থেকে যা করে চলেছি, তা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেলে যাওয়া ময়লা পরিষ্কার করা।’

এরপরই গর্ভপাত ইস্যুতে কামালা বলেন, ট্রাম্প জিতলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করবেন সারা দেশে, যেখানে নারীদের এ সিদ্ধান্তে সরকার বা ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই।

জবাবে, ডেমোক্র্যাটরা গর্ভধারণের নবম মাসেও গর্ভপাতে অনুমতি দিতে চান বলে দাবি করেন ট্রাম্প। অভিবাসী সংকট আর সীমান্তে অনুপ্রবেশ ইস্যুতেও সংকটের জন্য ট্রাম্পকে দোষ দেন কামালা।

বলেন, কংগ্রেসে অভিবাসন বিল পাসে ব্যর্থতার জন্য ট্রাম্প দায়ী। অন্যদিকে, অবৈধ অভিবাসীদের কীভাবে ফেরত পাঠাবেন- জানতে চাওয়া হলে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেননি ট্রাম্প। অভিবাসীরা পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলে বলেও হাস্যকর দাবি তোলেন রিপাবলিকান নেতা।

ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা সব কুকুর খেয়ে ফেলেছে। যারাই আসছে, বিড়াল খেয়ে নিচ্ছে। খালি খাচ্ছে। এখানে যারা থাকেন, তাদের পোষা প্রাণি খেয়ে ফেলছে। এগুলোই হচ্ছে এখন আমাদের দেশ। এটা লজ্জাজনক।’

কামালা হ্যারিস বলেন, ‘এদেশ, এ জাতির আরেকবার ট্রাম্পের ক্ষমতা নেয়ার মতো অবস্থা নেই । যখন আমরা এ ধরনের কথা শুনি, যখন মার্কিন জনজীবনে প্রভাব ফেলা বিষয়গুলো বাদ দিয়ে আলোচনা হয়, আমার মনে তখন আসলে এটা পরিষ্কার যে এই নির্বাচন থেকে প্রত্যাশা স্পষ্ট ।’

বর্ণবাদ, স্বাস্থ্যসেবা, অভিবাসন, জ্বালানি, ২০২০ সালের নির্বাচন, ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা ও ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর ইস্যুতেও হয় দীর্ঘ যুক্তিতর্ক।

নির্বাচনের ফল মনমতো না হলে ট্রাম্পের রক্তস্নানের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এ ঘটনায় অনুতাপ আছে কি না, উপস্থাপক জানতে চাইলে দায় প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার জন্য দায়ী করেন তৎকালীন ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে।

নির্বাচনের আট সপ্তাহ বাকি থাকতে হলো প্রথম নির্বাচনী বিতর্ক। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগের মধ্য দিয়ে বিতর্কে ইতি টানেন কামালা।

সমাপনী বক্তব্যে ট্রাম্প প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, এতো ভালো কাজ করতে চাইলে গত সাড়ে তিন বছরে কেন করেননি ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা। দু'বার স্বল্প বিরতি বাদে ৯০ মিনিটের দীর্ঘ বিতর্ক শেষ হতে না হতেই নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কের আমন্ত্রণ জানিয়েছে কামালার প্রচারণা শিবির।

এএইচ