এদিকে, স্বজনের মরদেহ শনাক্ত করতে সাও পাওলো সিটি অডিটোরিয়ামে জড়ো হয়েছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। স্বজন হারানোর শোক নিয়ে সাও পাওলোর সিটি অডিটোরিয়ামের সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। ভেতরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও কঠিন পরীক্ষা। শনাক্ত করতে হবে প্রিয়জনের মরদেহ।
শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ৩১টি মরদেহ উদ্ধার করে সাও পাওলো’র পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়। সকাল থেকেই সিটি অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ছিলেন ৩৮ যাত্রীর পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পারানা থেকে সাও পাওলো যাওয়ার সময়, উড়োজাহাজটিতে ৫৭ জন যাত্রী, চারজন ক্রু এবং আরও একজন অনিবন্ধিত আরোহী ছিলেন। শনিবার রাতের মধ্যে বাকি ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সেখানে আগত একজন বলেন, ‘গতকাল জানতে পারি আমার ভাইয়ের স্ত্রী লাশ শনাক্ত করতে সাও পাওলোতে আসছেন। ঠিক করি আমিও তার সাথে যাব। ভেতরে নিহতদের পরিবারের জন্য বসার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনগত কারণে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাদের স্বার্থ রক্ষাকেই আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। মনোবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীদের বিশেষ সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব না।’
নিহতদের মধ্যে চারজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। তাদের মধ্যে ৩ জন ভেনেজুয়েলা ও এক নারী পর্তুগাল থেকে এসেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, আসন বিন্যাস ও উদ্ধার করা মোবাইলের তথ্য ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্তের কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিমানের ককপিট-ভয়েস এবং ফ্লাইট-ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করা হলেও সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে সাও পাওলো অ্যাভিয়েশন অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন সেন্টার। রাজধানী ব্রাসিলিয়ার ল্যাবে পরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এভিয়েশন অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের বিগ্রেডিয়ার মার্সেলো মরেনো বলেন, ‘বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার হয়েছে। বিমানের পাইলটের সাথে এয়ার ট্রাফিক ও এয়ার কন্ট্রোল বিভাগের কী কথা হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমি নিশ্চিত করছি, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা মতো কোনো সময় এয়ার কন্ট্রোল বিভাগের হাতে ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট রেকর্ডার বা ব্ল্যাকবক্স মূলত দুই ধরনের হয়। তার একটি হচ্ছে এফডিআর ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার। গতকাল রাতে সেটি উদ্ধার করার পর পরীক্ষার জন্য ব্রাসিলিয়ায় পাঠানো হয়েছে। ফল হাতে আসলে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।’
বিধ্বস্ত হওয়া এটিআর সেভেন-টু ফাইভ হান্ড্রেড মডেলের বিমানটি এ নিয়ে ১৫ বার দুর্ঘটনার কবলে পড়লো। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে সাও পাওলো’র অ্যাভিয়েশন ইনভেস্টিগেশন সেন্টার।