আগামী জুলাইয়ে ব্রিকস সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রাজিল। বিশ্বের উন্নত সাত দেশের জোট জি সেভেনের আদলে ২০০৯ জন্ম নেয়া গ্লোবাল সাউথের এই মঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছে অংশীজন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে। স্থায়ী সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২৪ সালে ব্রিকস জোটে শামিল হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া। একই বছর কূটনৈতিক এই জোটের সদস্য বানানো হয়েছে ইরান, ইথিওপিয়া, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিনের পূর্বাভাস, উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলির এই জোটে যোগ দিতে পারে তুরস্ক ও সৌদি আরব। এতে করে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আসতে যাচ্ছে বড় পালাবদল। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চড়া শুল্কনীতির বিপরীতে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ব্রিকস জোট।
২০২৪ এর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে ব্রিকসের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারে সমর্থন দেয় ব্রিকসের সদস্যদেশগুলো। বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য খর্ব করার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সাম্রাজ্যবাদী শ্রেষ্ঠত্ব হারাতে পারে যাবতীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মুদ্রা বিনিময় ও অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম, ডলার।
ব্রিকসের জন্মলগ্নে এই আশঙ্কাই করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ১৬ বছর পর ব্রিকসের সম্প্রসারণ ভাবিয়ে তুলছে ট্রাম্প প্রশাসনকেও। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্য, ব্রিকস এখন একটি মৃতপ্রায় সংস্থা। আর কোনোভাবে ডলারের বিকল্প আনার চেষ্টা করলে ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে চীন। চলতি দশকের শেষে এই আধিপত্য হারাতে পারে ওয়াশিংটন। তাই বেইজিংয়ের হাত ধরে ডলারের বিকল্প আনার সাহস দেখাতে পারে ব্রিকস জোট।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ফ্রেজার হাউয়ি বলেন, 'ডলার মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি বিনির্মাণে উঠে পড়ে লেগেছে চীন। বিশেষ করে ব্রিকস জোটকে জি সেভেনের মতো জোটে পরিণত করতে চায় তারা। চীনের আশা, জোটভুক্ত দেশ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক লেনদেনে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করবে।'
অর্থনীতিবিদ রিচার্ড উলফস বলেন, 'অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের খেলা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। চীন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের তালিকায় শুরুর দিকেই আছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমান কী না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কিন্তু চলতি দশকের মধ্যে তারা সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ হতে যাচ্ছে। ফলে বলা যায়, অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সমান।'
যদিও দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রিক এই বিশ্লেষণের সাথে একমত হতে পারছে না পশ্চিমা থিংক ট্যাঙ্কগুলো। তারা বলছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী ব্রিকস জোটের সদস্যরা নিজস্ব মুদ্রা চালুর সুযোগ নিলেও, বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য ঠেকানো সম্ভব হবে না।