নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবন্দী বিনিময়

মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় শনিবার আরো ৩ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিলো হামাস। বিনিময়ে ইসরাইল মুক্তি দিচ্ছে সাড়ে ৩শ'র বেশি ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে। এদিকে, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠনে চলতি সপ্তাহে জরুরি বৈঠকে বসছে আরব বিশ্ব।

যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে অবশেষে শনিবার আরও তিনি ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিলো হামাস। শুক্রবারই প্রকাশ করা হয় মুক্তি পেতে যাওয়া তিন বন্দির নাম। গেলো মাসে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয় এই সিদ্ধান্ত। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে জড়ো হয়েছেন হামাস সদস্য আর গাজার সাধারণ মানুষ। কারণ একই দিনে মুক্তি দেয়া হবে ফিলিস্তিনের ৩শ' ৬৯ জন বন্দিকে। এই ধাপে মুক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফিলিস্তিনি।

এর আগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশ করতে না দেয়ার এবং চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে বন্দিদের মুক্তি না দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো হামাস। ফলশ্রুতিতে চটে গিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হুমকি দিয়েছিলেন, শনিবারের মধ্যে বন্দিদের মুক্তি না দিলে গাজায় সেনা অভিযান শুরু হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার আর মিশরের আলোচনায় আবারও শুরু হলো যুদ্ধবিরতির আওতায় বন্দি বিনিময়। যদিও একই হুমকি আবারও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘জানি না কি হবে, কিন্তু আমি কঠোর পদক্ষেপ নেবো। ইসরাইল কি করবে জানি না। নির্ভর করছে কোন পরিস্থিতিতে কি পদক্ষেপ নেবো। বিবি কি করে সেটাও দেখার বিষয়। হামাসের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এখন বন্দিদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি মনে করি তাদের সব বন্দিদের মুক্তি দেয়া উচিত।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় নতুন করে হামলা না হলেও হাসপাতালে ভর্তি আহত আর অসুস্থ অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছে মরদেহ।

এভাবে উপত্যকায় মোট মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৮ হাজার। হামাস বলছে, প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দ্বিতীয় দফা নিয়ে আলোচনা এখনই শুরু করা প্রয়োজন।

যদিও সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যুদ্ধবিরতিতে যতো জটিলতা, সবকিছুর জন্য দায়ী ইসরাইল। পশ্চিমতীরে এখনো অব্যাহত আছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আগ্রাসন।

কাতার, মিশর আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হয় ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি।

শর্ত ছিল, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে তেল আবিব। মুক্তি দেবে ইসরাইলি বন্দিদের, ইসরাইল মুক্ত করবে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ নিয়ে দ্রুতই আলোচনার কথা রয়েছে।

এমন অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজাবাসীকে অন্য আরব দেশে পাঠানোর প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়ে সৌদি আরব বলছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আরব দেশগুলোকে।

বিস্তারিত আলোচনা হবে চলতি মাসে রিয়াদে সৌদি আরব, মিশর, জর্ডানসহ অন্য আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠকে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

এদিকে, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠনের জন্য পরিকল্পনা করছে আরব দেশগুলো। এই মন্তব্য করে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, আর কোন ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থা জর্ডানের নেই। কারণ দেশের ৩৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই শরণার্থী।

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা বলছেন, পশ্চিমাদের পরিকল্পনা পুরোটাই ষড়যন্ত্রে ভরা। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে গাজা থেকে সরানো কিংবা হামাসকে নির্মূল করার পশ্চিমাদের সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে।

এএইচ