সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে যুদ্ধবিদ্ধস্ত গাজার বাসিন্দাদের মানবেতর জীবনযাপন এখন সবারই জানা। সেই জীবনযাপনের দুঃসহ স্মৃতি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে এক ভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে বসবাসকারী ডালিয়া আল-আফিফিসহ কয়েকজন। ত্রাণ সহায়তায় আসা খাবারের খালি ক্যান দিয়ে তাঁবু তৈরি করেছেন তারা।
তাঁবু উদ্যোক্তা ডালিয়া আল-আফিফি বলেন, 'এই তাঁবু তাদের বাস্তুচ্যুত জীবনের প্রতীক। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মানবেতর জীবনযাপনের বার্তা পৌঁছাতে এই ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি খাবারের ক্যান এক একজন গাজাবাসীর জীবনের গল্প। তবে গল্পটা আনন্দের নয়। গল্পটা অনিশ্চিত জীবনযাপন আর স্বজন হারানোর যন্ত্রণার।'
আফিফি আরও বলেন, 'এই তাঁবু আমাদের একটি অস্থায়ী আশ্রয়স্থল। যেখানে আমরা একে অপরের মনের ভাবনাগুলো শুনি। একে অপরকে সাহস দেই। এই তাঁবু আমাদের মনোবল তৈরিতে সাহায্য করে। বাস্তুচ্যুত যারা আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা চাইলে এই তাঁবুগুলোতে এসে থাকতে পারবেন।'
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে আসা মটরশুটি, মাংস ও হুমাসের খালি ক্যান দিয়ে তাঁবুর দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। খড় দিয়ে তৈরি তাঁবুর ছাদ ও কাঠ দিয়ে দরজা।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আসমা মারশুদ বলেন, 'আমরা একটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার। বাস্তুচ্যুত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের খাবারও শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তখন এই ক্যানজাত খাবারগুলোই ছিলো আমাদের বিপদের বন্ধু। এই খাবারগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এ তাঁবুটি আমাদের কষ্টের প্রতীক।'
গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ইসরাইল হামাসকে ধ্বংসের অজুহাতে একের পর এক স্থল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে পুরো গাজা উপত্যকায়। ইসরাইলের এসব নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি, যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৭৮ হাজার।
ইসরাইলের তান্ডবলীলায় এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে।