বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকোচন , উচ্চ বাজেট ঘাটতি ও জনগণের ওপর করের অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে ২০২২ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এ কারণে যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল চার শতাংশের ওপরে। কিন্তু চলতি বছরে বিভিন্ন কারণে সামনে আসছে রুশ অর্থনীতির নেতিবাচক চিত্র। যা নিয়ে সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ঝুঁকির মুখে রয়েছে মস্কোর অর্থনীতি। তবে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট সবসময় দেশের জনগণের কথা ভাবেন। তিনি যা কিছু করেন দেশের নাগরিকদের বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রেখেই করেন। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষিত। আর এটিই আমাদেরকে উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।’
তবে পুতিন ও তার প্রতিনিধিরা রুশ অর্থনীতি নিয়ে যতই আশার কথা শোনান না কেন , সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের ছাপ পড়তে শুরু করেছে দেশটির জনজীবনে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, বছরের প্রথম আট মাসে দেশটির বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা মস্কোর পুরো বছরের জন্য ধারণা করা ৪৭ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া রয়টার্স জানায়, ২০২৪ এ চার দশমিক তিন শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর, এ বছর এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মস্কোর। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাসে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক নয় শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ম্যাক্রো অ্যাডভাইসরির সিইও ক্রিস ওয়েফার বলেন, ‘গত বছর রাশিয়া মিলিটারি খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। এ খাতে সৈনিকদের আকৃষ্ট করতে উচ্চ বেতন দিয়েছে মস্কো। একারণে খরচ বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। তবে এ বছরের প্রথম আট মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ এর ঘরে। সুতরাং যুদ্ধকালীন মস্কোর অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ তলানির পথে। ইতোমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে যাচ্ছে।’
বার্তাসংস্থাটি আরও জানায়, আগামী বছর প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট কমানোর পরিকল্পনা করছে ক্রেমলিন। ১১ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে এ খাতের বাজেটের সম্ভাব্য পরিমাণ হতে পারে ১৫৪ বিলিয়ন। বাজেট সংকটের শঙ্কায় এ বছর ধীরগতিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ক্রেমলিন। প্রথম আট মাসে ইউক্রেনের এক শতাংশেরও কম জায়গা দখল করে রুশ বাহিনী।
অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে ভ্যাটের পরিমাণ ২০ থেকে ২২ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে পুতিন সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, রুশ সরকার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রতিরক্ষা খাতকে সমৃদ্ধ করতে সরকারি ব্যাংকের অর্থ খরচ করায় মন্দার শঙ্কায় দেশটি। রাশিয়ার জাতীয় কল্যাণ তহবিলে তারল্যের পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ কমে ৩৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ২০২৬ সালের পুরোপুরি শেষ হতে পারে সঞ্চিত ভাণ্ডার। এরই মধ্যে কর্মী ছাটাই শুরু করেছে অনেক রুশ কোম্পানি।
তবে রাশিয়ার অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে থাকলেও একেবারে ভেঙ্গে পড়বে না বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। ইউক্রেন ঘনিষ্ঠ দেশগুলো মস্কো থেকে তেল না কেনায় দেশটি বার্ষিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বঞ্চিত হলেও, যুদ্ধের পর তাদের তেল বিক্রির অন্যতম উৎস চীন ও ভারত। বেইজিং ইতোমধ্যে মস্কোর কাছ থেকে আগাম কয়েক বছরের তেল কম মূল্যে কিনে ফেলেছে। এর অর্থ রয়েছে রুশ কোষাগারে।




