রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত সমাধান আসেনি ৩ বছরেও। ইউক্রেনের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে ইউক্রেন।
অবশেষে ইস্টার সানডে উপলক্ষে ইউক্রেনের সঙ্গে ৩০ ঘণ্টার সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বলবৎ থাকবে। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন প্রতিহতে প্রস্তুত আছে রুশ সেনারা। পুতিন জানান, যুদ্ধবিরতির সময় ইউক্রেনের পদক্ষেপ বলে দেবে তারা শান্তির পথে আসতে কতটা আন্তরিক।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, 'মানবিক বিবেচনায় ৩০ ঘণ্টার জন্য রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে সব সামরিক তৎপরতা বন্ধ থাকবে। ইউক্রেনও একই পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে, ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে রুশ সেনারাও প্রস্তুত থাকবে।'
এদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিযোগ, সাময়িক যুদ্ধবিরতি দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টায় আছেন পুতিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে তিনি বলেন, এরমধ্য দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলার নতুন পায়তারা করছেন পুতিন। এদিকে, পুতিনকে মিথ্যাবাদী বলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভের বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'ইউক্রেনের মানুষ এখন উল্টো হামলার শঙ্কায় আছে। কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি নেই।'
অন্য একজন বলেন, 'পুতিনের কথার ওপর ভরসা নেই। রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ক্রমাগত মিথ্যা বলে যাচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যমে তারা নতুন করে হামলা চালাবে।'
কিয়েভে বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, 'এটি প্রথমবার নয়। এর আগেও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে।'
যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কোবাসী। তাদের মতে, যেকোনো সময়ের যুদ্ধবিরতি ভালো কিছু হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
রাশিয়ার স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভালো। ইস্টার সানডে শেষ হওয়ার পরও এটি অব্যাহত থাকুক এটিই আমাদের চাওয়া।'
অন্য একজন বলেন, 'আমরা সবসময় ভালোকিছু আশা করি। রাশিয়ার জনগণ শান্তি চায়, তবে কেউ আক্রমণ করলে খালি হাতে বসে থাকবে না।'
বিশ্লেষকদের ধারণা, হুট করে যুদ্ধবিরতি দিয়ে ট্রাম্পকে আপাতত শান্ত করার চেষ্টা করছেন পুতিন। এছাড়া, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে এটি আরেকটি কৌশল হতে পারে রাশিয়ার।
ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো মারিয়া স্নেগোভায়া বলেন, 'পুতিন আসলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একরকম যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন। সম্প্রতি, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন পুতিন। তাই এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেন পুতিন। একইভাবে, পুতিন আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন।'
এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরই ইউক্রেনজুড়ে বেজে ওঠে বিমান হামলার সাইরেন। সতর্ক করা হয় বাসিন্দাদের। যুদ্ধবিরতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিয়েভের সামরিক কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।
কুরস্ক অঞ্চলের সবশেষ বসতি থেকে ইউক্রেন বাহিনীকে বিতাড়িত করার পরই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়। এর আগে ২০২৩ সালে অর্থডোক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। তখন যুদ্ধ বন্ধের পেছনে গোপন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।