জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ওয়েসবাডেন শহরের ছাপাখানার মেশিনগুলো দিনরাত সচল। জার্মানির সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচ কোটি ভোটারের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা চলছে। এই ছাপাখানা থেকে ব্যালটগুলো চলে যাচ্ছে পোলিং স্টেশনে। সময় কম থাকায় ছাপাখানার কর্মীদের কর্মব্যস্ততা অনেক বেশি। যারা ডাকযোগে আগাম ভোট দেবেন, তাদের জন্য হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররাও। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেগুলো চলে এসেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পোস্টের মধ্য দিয়ে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।
স্থানীয় একজন ভোটার বলেন, 'অনেক কাজ করতে হচ্ছে, কারণ সময় কম। পুরো সপ্তাহ এভাবেই কাজ করবো যেন সময়ের আগে শেষ করতে পারি।'
অন্য একজন ভোটার বলেন, 'ছুটিতে যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে যে আগেই ভোট দিতে পারছি। ভেবেছিলাম ভোট দিতে পারবো না।'
জার্মানিতে অভিবাসন সংকট আর মূল্যস্ফীতির মধ্যেই আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি হতে যাচ্ছে দেশটির সাধারণ নির্বাচন। এবারের প্রচারণায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দেশের অর্থনীতি আর অভিবাসন সংকট। দেশে জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী, সুদের হার বেশি আর অর্থনৈতিক নানা অনিশ্চয়তায় প্রবৃদ্ধি পড়ে গেছে ঝুঁকিতে। মূল্যস্ফীতি আর বেকারত্ব বাড়ায় দেশের অর্থনীতির চাকায় দেখা গেছে ধীরগতি। সাধারণ মানুষের স্বার্থকে কাজ করবে, তা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে সংশয়।
জার্মানির একজন বলেনু, 'শুধু অভিবাসনে গুরুত্ব দিলে হবে না। শুধু এই ইস্যুতে গুরুত্ব দিলে অন্য কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।'
স্থানীয় একজন বলেন, 'দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে স্বাধীনতা, অর্থনীতি, অভিবাসন নীতি আর গণতন্ত্র তো আছেই।'
চলতি মাসেই জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন আর অলটারনেটিভ ফর জার্মানির অভিবাসন নিয়ে অলিখিত চুক্তির পর নড়েচড়ে বসেছে দেশের সাধারণ মানুষ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে এই চুক্তি করলেও বিরোধিতা করে সেসময় রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার জার্মান বিক্ষোভকারী। চুক্তি অনুযায়ী, স্থায়ীভাবে সীমান্ত বন্ধ করে অবৈধ অভিবাসীদের জার্মানি থেকে নিজ দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। এখন এই ইস্যুই নির্বাচন সামনে রেখে সবচেয়ে বড় জাতীয় ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পর দেশটির অভিবাসন সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'অভিবাসন নিয়ে এবার অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুধু একটা বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা না। ডেমোক্রেটিক পার্টি ফাঁদে পড়ে গেছে।'
এবার জার্মানির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছে ফ্রেডরিক মার্জের রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন অব জার্মানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে অভিবাসন সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে ওলাফ শুলজ জোটের দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির। অংশ নিচ্ছে কট্টর ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি। যদিও কোনো দলই চাইছে না এই কট্টর ডানপন্থি দলের সঙ্গে জোট করতে।
এখন পর্যন্ত চ্যান্সেলর হিসেবে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী এগিয়ে। রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের ফ্রেডরিক মার্জ, রয়েছেন বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। যিনি এরইমধ্যে বিতর্কিত দেশটির ঋণসংকট সমাধানে। রয়েছেন অলটারনেটিভ ফর জার্মানির চ্যান্সেলর প্রার্থী এলিস উইডেল, শলজ সরকারের ভাইস চ্যান্সেলর আর অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক। বুথফেরত জরিপ বলছে, এখন পর্যন্ত ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন আর ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের জোট এগিয়ে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি।