পাখির ধাক্কা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, না কি ইউক্রেনের ড্রোন ভেবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ঠিক কোন কারণে রাশিয়াগামী আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমানটি কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত হলো। এমন প্রশ্নের মধ্যে ঘটনার তিনদিনের মাথায় এসে বিমানটির দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয় শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর)। কিন্তু বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনকার রহস্যের ধূম্রজাল ভেদ করা যায়নি এখনও। তাই সবকিছু ছাপিয়ে এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে রাশিয়ান এয়ার-ডিফেন্স মিসাইল বিস্ফোরণ থেকে বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা।
বিমানে থাকা ৬৭ আরোহীর মধ্যে ৩৮ জন প্রাণ হারালেও অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরাদের অনেকের মন্তব্য থেকেও রাশিয়ার দিকেই অভিযোগের পাল্লা ভারি হচ্ছে। বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনি বিমানবন্দরের কাছে যাওয়ার সময় তারা বিকট শব্দ শুনেছে। পরে কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বিমানটি।
একজন যাত্রী বলেন, 'যখন প্রথম বিস্ফোরণ হয় আমি চারপাশে তাকালাম। আমি ভেবেছিলাম যে বিমানটি ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু কয়েক মিনিট কেটে গেলো। পরে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যাই।'
খোদ রাশিয়ার বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষও বলছে, কুয়াশা এবং ইউক্রেনের ড্রোন হামলা সতর্কতার সময় বিধ্বস্ত হয়েছে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমানটি। তাই তদন্তের মধ্য দিয়ে আসল কারণ উদঘাটনে, সব পরিস্থিতিই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শনাক্ত ও যাচাই করা প্রয়োজন।
রাশিয়ার ফেডারেল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির প্রধান দিমিত্রি ইয়াদ্রোভ বলেন, 'ঘটনার দিন গ্রোজনি বিমানবন্দর এলাকার পরিস্থিতি বেশ কঠিন ছিল। কারণ ইউক্রেনীয় ড্রোন গ্রোজনি এবং ভ্লাদিকাভকাজ শহরে বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছিল। এই কারণে, এসব এলাকা থেকে সব বিমানকে অবিলম্বে আকাশসীমা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে ৫০০ মিটার উচ্চতায় কিছুই দেখা যায়নি। আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের ওই বিমানকে অন্যান্য বিমানবন্দরে নামার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।'
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলে বিমানকে ড্রোন ভেবে ভূপাতিত করার বিষয় অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তবে আসলেই রাশিয়া দায়ী কি-না তার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু তদন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস এ কুপচান বলেন, 'সত্যিই যদি বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থার কারণে ক্র্যাশ হয়ে থাকে, তবে এটি যুদ্ধ চলমান অঞ্চলের অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। তবে রাশিয়ান বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রের আঘাতেই এই বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার জন্য দায়ী কি-না তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।'
যদি রাশিয়া দায়ী হয়েও ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে আজারবাইজানের সাথে সম্পর্কে ফাটল দেখা দেবে বলেও শঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
পেন্টাগনের সাবেক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যান মারি ডেইলি বলেন, 'রাশিয়া যদি এটিকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে বা ধামাচাপা দেয়, তবে আজারবাইজানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হতে পারে। যদি রাশিয়া তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা না চায় এবং তার আকাশসীমা ব্যবস্থাপনায় আরও স্পষ্টতা নিশ্চিত না করে তবে এটি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ বিশেষ করে রাশিয়া এবং তার সীমান্তবর্তী এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে।'
তদন্ত শেষ হওয়ার আগে নিজেদের ওপর আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না ক্রেমলিন। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে আজারবাইজান সরকার। তবে বিমান দুর্ঘটনার জন্য বাহির থেকে হওয়া আঘাতকেই দায়ী করছে আজারবাইজান এয়ারলাইন্স। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।