২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আজও সমাধান আসেনি। দিন যত যাচ্ছে দুই পক্ষের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা। এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে। সম্প্রতি রাশিয়ার শীর্ষ জেনারেল ইগর কিরিলোভকে হত্যার ঘটনায় পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো যেকোনো উপায়ে এর প্রতিশোধ নিতে পারে। অন্যদিকে, ইউক্রেনও চাইছে হাই-প্রোফাইল কর্মকর্তাকে হত্যা করে রাশিয়া বুকে আরেকটি ছুরি বসাতে।
রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে বলে দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। পশ্চিমা সামরিক জোট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছে পিয়ংইয়ং ও মস্কো। যুদ্ধে তাদের অর্ধশতাধিক সেনা নিহতের বিষয়টিও চেপে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। যদিও ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে কোরীয় সেনারা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সুসজ্জিত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশিয়ার সমর্থনের তীব্র নিন্দা জানায় পশ্চিমা অনেক দেশ। গেল সেপ্টেম্বরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন নিজেদের সুরক্ষায় পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশিয়া অংশ নিতে যাচ্ছে। যা কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতির বিপরীত দিকে হাঁটছে মস্কো। আমাদের আশা পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়নে বাধা দেবে রাশিয়া।’
রাশিয়া বলছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিচ্ছে মস্কো।
জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি। যার যার অবস্থান থেকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। এতে দোষের কিছু নেই। এই সম্পর্ক অন্য কোনো অঞ্চল বা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়। পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সহায়তা মস্কোকে শক্তিশালী করে তুলেছে। দুই দেশই তাদের নিজেদের লাভে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। নিউইয়র্কে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
এদিকে, ব্রাসেলসে ন্যাটো প্রধান ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের সুরক্ষার বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের জন্য ফ্রান্সের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় ব্রাসেলস সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি ইউক্রেনের জন্য একটি ভাল সুযোগ। অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। আমরা ইউরোপে বিভক্ত নয়, যৌথ অবস্থান নিশ্চিত করতে চাই।’
যদিও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলছেন, ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা এখনই থামানো উচিত। ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনের লক্ষ্যগুলো তুলে ধরতে হবে। আর জাতিসংঘ বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গেল দুই মাসে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪০ হাজার মানুষ।