পার্লামেন্টে চলছে আস্থা ভোট, আর এতে হেরে যেতে চাইছেন সরকারপ্রধান। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই পরিস্থিতি ছিল জার্মানিতে। আর হয়েছেও তাই।
জার্মানির ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে হেরে বসলেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধানের হার এটি। বাজেট নিয়ে মতবিরোধের জেরে গেল মাসে জোট সরকারের অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন চ্যান্সেলর। সে সময় থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপড়েন। পার্লামেন্টে বিল পাসের ক্ষেত্রে বিরোধীদের পাশাপাশি জোট সরকারের আইনপ্রণেতাদের বাধার সম্মুখীনও হতে হয় ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে। তাই আস্থা ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না শলৎজের সামনে।
ভোটগ্রহণের আগে জার্মান চ্যান্সেলর অভিযোগ করেন, অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ ধরে জোট সরকারকে অস্থিতিশীল করছিলো ফ্রি ডেমোক্র্যাট দলের আইনপ্রণেতারা। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দেশের ক্ষতি করছিলেন তারা। তাই আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আস্থা ভোটই একমাত্র বিকল্প ছিল তার হাতে। সত্য জেনে জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের আহ্বানও জানান চ্যান্সেলর।
ওলাফ শলৎজ বলেন, 'সত্য উন্মোচিত হয়েছে। বিভিন্নভাবে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনীতি কোনো খেলা নয়। সরকারে অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে দলের বদলে দেশকে প্রাধান্য দিতে হয়। যা এতদিন উপেক্ষিত ছিল।'
তবে বিরোধী দলের নেতা বলছেন ভিন্ন কথা। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের প্রধানের দাবি, জার্মানির অর্থনীতিকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে শলৎজের সরকার। জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপানোয় জরুরি ছিল ক্ষমতাসীনদের পতন।
সিডিইউ প্রধান ফ্রেডরিক মার্জ বলেন, 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুইবার মন্দার মুখে পড়ে জার্মানি। প্রথমটি ২০১০ সালে। সেবার অন্তত ক্ষমতাসীনরা মন্দা কাটাতে বেশ কিছু নীতি প্রণয়ন করে। তবে এবার সেটিও করা হয়নি। নতুন প্রজন্মের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে পালাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।'
ইউক্রেনকে সহায়তা ও জার্মানির মেগা প্রজেক্টগুলোয় বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাজেট প্রণয়ন করতে চাচ্ছিল ক্ষমতাসীন এসডিপি। যা আটকে দেন জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডার। জনগণের ওপর ঋণের বোঝা কমানোর পক্ষে ছিলেন তিনি।
আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন চ্যান্সেলর। যেখানে ২৩ ফেব্রুয়ারি আগাম নির্বাচনের দিন প্রস্তাব করেছেন ওলাফ শলৎজ। ধারণা করা হচ্ছে বড়দিনের ছুটি শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রেসিডেন্ট। তবে জরিপ বলছে, জার্মানির ক্ষমতায় শলৎজের ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। উল্টোদিকে এগিয়ে থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মতো জনসমর্থন নেই বিরোধী দল সিডিইউ'র। তাই আগাম নির্বাচনে আবারও জোট সরকার গঠন হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।