পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র রুশ ভূখণ্ডে পড়ার পর থেকেই ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। রোববার (২৪ নভেম্বর) দেশটির ১৪১টি অঞ্চলে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। হামলা হয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বিমানবন্দর, ড্রোন উৎপাদন কারখানা আর অস্ত্রের গুদামে। একদিনে ইউক্রেনের ৪৪ টি ড্রোন ভূপাতিত করে ফেলেছে রুশ সেনাবাহিনী।
শনিবারও (২৩ নভেম্বর) ইউক্রেনের ২০টি সামরিক ইউনিট ধ্বংস করেছে রাশিয়া। গুড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমাদের লিওপার্ড ট্যাঙ্ক, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আর্টিলারি, যুদ্ধযান ও যুদ্ধবিমান। ভূপাতিত করেছে ৫৯টি ড্রোন। দু'দিনে শতাধিক স্থানে হয়েছে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত। ইউক্রেনে ছোড়া পুতিনের নতুন নতুন মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে পশ্চিমাদের আতাকামাস আর স্টর্ম শ্যাডো দিয়ে রাশিয়ায় হামলার পর থেকে কপালে যেন শনি নেমেছে ইউক্রেনের। আগস্ট থেকে দখলে রাখা কুরস্ক অঞ্চল হয়ে যাচ্ছে হাতছাড়া। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, কুরস্কের ৪০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে পুতিনের হাজার হাজার সেনা। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনাও।
আগস্টে ইউক্রেনের সেনাদের অনুপ্রবেশের পর সেখানকার এক হাজার ৩৭৬ কিলোমিটার এলাকা কিয়েভের দখলে ছিল, এখন যা নেমে এসেছে ৮০০ কিলোমিটারে। ইউক্রেন প্রশাসন জানায়, অনুপ্রবেশের পর এখান থেকে এক লাখ ২০ হাজার সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গেল আগস্টে প্রথম রাশিয়ার কুরস্কে এত বড় সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।
এদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সেনা সংকটে পড়ে উত্তর কোরিয়া থেকে সেনাদের নিয়ে এসেছেন পুতিন। এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়ার বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে লোভনীয় অফার দিচ্ছে রুশ প্রশাসন। সম্প্রতি রুশ পার্লামেন্টে পাশ হয়েছে নতুন আইন।
যেখানে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সী বা তার কম বয়সী তরুণ নাগরিকরা যদি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক বছর যুদ্ধ করে, তাদের প্রায় এক লাখ ডলার বা ১০ লাখ রুবল পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ মওকুফ হয়ে যাবে। ৯৬ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করে দেবে রুশ সরকার। তবে পহেলা ডিসেম্বরের আগে যাদের ঋণ সংক্রান্ত সব তথ্য সরকার সংগ্রহ করেছে, তারাই আবেদন করতে পারবে এই প্রক্রিয়ার জন্য।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একদিনের জন্যেও ইউক্রেনে ড্রোন কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা বন্ধ রাখেনি রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, গেলো বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত এই হামলায় দেশটির অবর্ণনীয় অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। তার আশঙ্কা, ২০ জানুয়ারির মধ্যে পুরো দনবাস দখলে নেবেন পুতিন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর আগে কৃষ্ণসাগর বন্দর দিয়ে মাসে ৬০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করতো দেশটি। যুদ্ধ শুরুর পর এই সরবরাহ ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হয়। এরপর থেকে বিকল্প উপায়ে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া আর তুরস্কের জলপথ ব্যবহার করে শস্য সরবরাহ করছে ইউক্রেন।