রোববার (১০ নভেম্বর) রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৮০টিরও বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে মস্কো। এসময় কার্যক্রম বন্ধ থাকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিমানবন্দরের। মস্কো জানায়, সন্ত্রাসী হামলা আতঙ্কে ৩৬টি বিমানের রুট পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। অথচ মস্কোতে দুই কোটিরও বেশি মানুষের বাস।
অন্যদিকে রোববার ইউক্রেনের ওডেসায় ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায় মস্কো। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া শনিবার রাতেও প্রায় ১৫০ ড্রোন ছুড়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশিই ছিল ইরানের তৈরি ড্রোন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষ্ণসাগর বন্দর। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে দুই পক্ষকেই চাপ দেবে এমন আশঙ্কায় মস্কো-কিয়েভ বাড়িয়ে দিয়েছে ড্রোন হামলা।
দুই পক্ষের সেনাবাহিনী আকাশযানের মজুত বাড়িয়েছে। ইউক্রেন নিজ দেশেই উন্নত ড্রোন তৈরি করছে আর ড্রোনের হামলা সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। যেন ড্রোনগুলো রাশিয়ার অভ্যন্তরে শত কিলোমিটার উড়ে হামলা করতে পারে। এরমধ্যে অস্ত্রের গুদাম, জ্বালানি তেল উত্তোলন স্থান, কাস্পিয়ান সাগরে নৌযানে হামলা করেছে ইউক্রেন। অন্যদিকে রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চলে ফাইবার অপটিক ক্যাবল চালিত ড্রোন ব্যবহার করছে। এই ড্রোনগুলো বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে জ্যাম করা কঠিন। কুরস্ক পুনর্দখলে গাইডেড বোমা, কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করলেও কোনোভাবে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরাতে পারছে না রুশ সেনারা।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কুরস্ক অঞ্চল ইউক্রেন থেকে পুরোপুরি ফিরিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করেছে রাশিয়া। সংবাদমাধ্যম সিএনএন'কে মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কুরস্কে সেনা অভিযান চালাতে প্রস্তুত রুশ ও উত্তর কোরিয়ার ৫০ হাজার সেনা। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা রয়েছে এই অঞ্চলে, যেখানে ইউক্রেনের তিন মাসের সেনা অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলে এখন শঙ্কায় পড়ে গেছে দুই পক্ষই।
রাশিয়ার এত শক্তিশালী সেনাবহর থাকতেও কেন প্রয়োজন পড়লো উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীকে? ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছে চাঞ্চল্যকর জবাব। ব্রিটিশ চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ স্যার টনি রাডাকিন জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর চলতি বছরের অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি রুশ সেনা সদস্যের প্রাণ গেছে। অক্টোবরে দৈনিক এক হাজার ৫০০ সেনা আহত আর নিহত হয়েছেন। রাশিয়া এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে পরিষ্কার করে কোন তথ্য দেয়নি। তিনি আরও বলেন, পুতিনের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত রুশ সাত লাখ মানুষ হতাহত হয়েছেন।
ট্রাম্পের জয়ের পর আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ১০ বছর পুরনো দ্বন্দ্ব। এই আশঙ্কাও করছিলেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনে জেতার পরপরই গেলো সপ্তাহে ট্রাম্প আর ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনালাপ হয় জেলেনস্কির। কথা হয়েছে পুতিনের সঙ্গেও। এরপরই পরস্পরের ভূখণ্ডে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া।