কেউ যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে, কেউ চড়েছেন সাইকেলে। প্লাস্টিকের ব্যাগ কিংবা ট্রলিতে অল্পকিছু মালপত্র নিয়ে নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছেন ইউক্রেনীয় বাসিন্দারা। শুধু পোষা প্রাণীটিকে কোলে নিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ।
ইউক্রেনীয় সেনাদের হামলার জবাবে রাশিয়া পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করায় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলের ২৮টি এলাকার বাসিন্দাদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, সুমির আশেপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যে কোনো মুহূর্তে বোমা হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় এরইমধ্যে বসতবাড়ি ছেড়েছেন অন্তত ২০ হাজার বাসিন্দা।
ইউক্রেনীয় সেনারা এখানে আসার পর থেকে বিমান ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে রুশ বাহিনী বোমা হামলা চালাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকালে দেখবেন, সেখানে শুধু শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার মহড়া দিচ্ছে
গেল ৬ আগস্টের পর থেকে থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের হামলার জবাব দিতে গেল শুক্রবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কোস্তিয়ান-তিনিভকা'র একটি সুপারমার্কেটে মিসাইল হামলা চালায় রাশিয়া। এতে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হন অন্তত অর্ধশত। জনবহুল স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দোনেৎস্কের আঞ্চলিক প্রধান বলেন, এই হামলা প্রমাণ করে স্বার্থের জন্য রুশ সেনারা কতটা বর্বর হতে পারে।
এর আগে, কুরস্ক অঞ্চলের সুদজা শহরের একটি গ্যাস ট্রান্সমিশন হাব দখলে নেয় ইউক্রেনীয় বাহিনী। শুক্রবার এক টেলিগ্রাম বার্তায় ইউক্রেনীয় সেনারা জানান, গেল চারদিন ধরে এই স্থাপনাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে আসছিল রুশ সেনারা।
এদিকে, গেল ৪ দিনের চলমান ঘটনাপ্রবাহে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ইউক্রেন যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে রাশিয়াকে নতুন করে যুদ্ধনীতি সাজাতে হতে পারে, এমন আভাসও দিচ্ছেন অনেকে।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানান, 'তারা যা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। সীমান্ত অঞ্চলে উভয়পক্ষের মধ্যে যত সংঘাত হয়েছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের সবশেষ হামলা আগের সব হামলাকে ছাপিয়ে গেছে। তবে দেশটির দক্ষিণ প্রান্তে সেনাদের অবস্থান খুব একটা পোক্ত নয়। তবুও আমি বলবো, রাশিয়া এখন দুর্বল অবস্থায় আছে। অল্প সময়ের জন্য হলেও বল এখন ইউক্রেনের দখলে। ইউক্রেন চাইলে রুশ সেনাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে'।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজ ভূখণ্ড রক্ষায় লড়াই চালিয়ে আসছে ইউক্রেন। চলতি মাসের শুরু থেকেই যেভাবে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে রুশ বাহিনী। কিয়েভকে পাল্টা জবাব দিতে নতুন কোন চাল চালবে মস্কো- সেদিকেই এখন নজর বিশ্ববাসীর।