ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

ইউক্রেন সীমান্তের দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের সামরিক প্রশিক্ষণের হিড়িক

সেনাবাহিনীতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে মরিয়া হয়েছে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রতিরক্ষা বিভাগে লোকবল নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ। এমন বাস্তবতায় স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বিভাগ। কিন্তু খাতা-কলম ছেড়ে অস্ত্র ধরতে কতখানি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে তারা?

চেক প্রজাতন্ত্রের ভ্যালেক অঞ্চলের জঙ্গলে বসানো হয়েছে ট্রেনিং গ্রাউন্ড। অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন একদল তরুণ-তরুনী। তবে তারা কেউই সেনাবাহিনীর সদস্য নন। চেক সেনাবাহিনীর একটি পাইলট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে কলেজ শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে রাইফেল চালানো থেকে শুরু করে গা ঢাকা দেয়ার সামরিক কলাকৌশল।

গেল কয়েক বছরে সেনা সক্ষমতা ও লোকবল বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও ন্যাটোভুক্ত দেশ চেক প্রজাতন্ত্র। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী দেশগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ মস্কোর অতর্কিত হামলা। এই মুহূর্তে দেশটির সেনা সক্ষমতা রুশ হামলা প্রতিহত করার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নয় বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিভাগ।

একজন সেনা সদস্য বলেন, 'এই প্রশিক্ষণ জরুরি। কারণ, আধুনিক সেনাবাহিনীর যে ধরনের সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন তা আমাদের নেই। আমরা তরুণদের কাছে পৌঁছাতে চাই। তাদের বোঝাতে চাই, চেক সেনাবাহিনীতে কাজ করা কতটা সম্মানের হতে পারে।'

চেক প্রজাতন্ত্রের অন্তত ৮০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের অংশ হিসেবে চার সপ্তাহের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। রাজধানী প্রাগের ৯৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বসেছে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প। যদিও অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছে। তবে কেউ কেউ এমন ক্রান্তিলগ্নে চুপ করে বসে থাকার পক্ষপাতি নন।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'বন্দুক চালানো ও সেনা প্রশিক্ষণ মোটেও সহজ কাজ না। যারা এসেছে তারা তাদের সহপাঠী বা সহকর্মীদের কখনোই এই প্রশিক্ষণে অংশে নিতে উৎসাহ দিতে পারে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই আমাদের প্রশিক্ষণ নিতে বলা হচ্ছে। ইউরোপে যা ঘটছে তা আমরা সকলেই জানি। তাই, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে চাই না। পরিবার ও ভালোবাসার মানুষকে রক্ষা করতে হলে আমরা যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত।'

২০২১ সালে চেক সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় লোকবলের মাত্র ৫৬ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশে। যদিও নবনিযুক্ত সদস্যদের অধিকাংশকেই যুদ্ধে পাঠানোর মতো প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয়নি।

একজন সেনা সদস্য বলেন, 'নতুন সেনা সদস্য নিয়োগ ও নতুনদের প্রশিক্ষণ দেয়া চেক প্রজাতন্ত্রের জন্য ভীষণ জরুরি। আমাদের সেনাবাহিনীতে মাত্র ২৫ হাজার সদস্য আছে। এত ছোট দল নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা সম্ভব না। কাজেই শুধু প্রতিরক্ষা বিভাগ নয়, জাতিগতভাবেও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।'

সেনা সদস্য নিয়োগ বাড়াতে মরিয়া পোল্যান্ডও। তবে তিন লাখ সেনাসদস্য নিয়ে সেনাবাহিনী গঠনে পোলিশ সরকারের উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ।

পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ পোল্যান্ড তাদের জিডিপি'র ৫ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয়ের কথা ভাবছে। সম্প্রতি 'হলিডেইস উইথ আর্মি' শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইনের আওতায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নাগরিকদের টানা ২৮ দিন ধরে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পোলিশ সেনাবাহিনী। এসব কারণে নতুন সেনা সদস্য নিয়োগ কিছুটা বাড়লেও ২০২৩ সালে সালে পোলিশ সেনাবাহিনী ছেড়েছেন অন্তত ৯ হাজার সদস্য।

পোল্যান্ড বা চেক প্রজাতন্ত্রের মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বেকারত্বের খুব একটা বড় সমস্যা নয়। ফলে, বেসরকারি সংস্থার ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। পূর্ব ইউরোপের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সেনা সক্ষমতার এই ঘাটতি সামরিক জোট ন্যাটোর জন্য নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কিনা এখন সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্বের।

tech