৪ জুলাই ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক চার হাজার ৫১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাজ্যেরে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের পূর্বে জনমত জরিপ বলছে পাঁচজন পৃথক প্রধানমন্ত্রীর অধীনে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কনজারভেটিভ শাসনের পর ভোটের ফলাফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা জাগিয়েছে লেবার পার্টি।
নির্বাচন কেন্দ্রিক আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, স্বাস্থ্য খাতের অচলাবস্থা, আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় ও অভিবাসন ইস্যু। সাধারণ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে জনগণের মাঝে বাড়ছে অসন্তোষ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কনজারভেটিভ পার্টির উপর। যদিও মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশে কমিয়ে আনা ঋষি সুনাকের সাফল্য হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছে।
চলতি নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ঋষি সুনাক অনেকটাই একা। বরিস জনসনসহ টোরি সিনিয়র নেতাদের কেউই সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। নির্বাচনের পূর্বে প্রায় ৮০ জন সিনিয়র এমপি সরে দাঁড়িয়েছেন। এতোটাই খারাপ অবস্থা যে নিজের আসনই হারানোর শঙ্কায় আছেন ঋষি সুনাক। এর মধ্যে পপুলিস্ট কট্টর ডানপন্থী রিফর্ম ইউকে পার্টির নাইজেল ফারাজ দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে কনজারভেটিভদের। নির্বাচনের মাঠে এসে ভোট জরিপের চিত্র বদলে দিয়েছেন কট্টর ডানপন্থী নাইজেল ফারাজ।
সরকার গঠনের পূর্বাভাস থাকলেও গাজা ইস্যুতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চিন্তার কারণ হতে পারে লেবার পার্টির। আর কট্টর ডানপন্থী রিফর্ম পার্টি অস্বস্তির কারণ হতে পারে কনজারভেটিভ পার্টির জন্য। তবে আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে ক্ষমতাসীন দলের জন্য। এছাড়াও আয়কর বৃদ্ধি আর বেকারত্বের মতো বিষয়গুলো প্রধান ইস্যু হয়ে উঠবে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের প্রফেসর ড. মুশফিক উদ্দিন বলেন, 'সরকারের বিভিন্ন নেতাকর্মী বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে যে মিথ্যাচার করে আসছে সে মিথ্যাচারের ফলে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে সে সংকট থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। সরকারকে যথা উপযুক্ত মনিটারি ও ফিসকাল পলিসির মাধ্যমে জনগণকে কস্ট অব লিভিং ক্রাইসিসের মধ্য থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।'
যুক্তরাজ্যের স্বাধীন অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএফএসের ভাষ্যমতে, ব্রিটেনের পরবর্তী সরকার কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এছাড়াও অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বেকারত্বও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে আসবে নতুন সরকারের।
নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার পরিকল্পনায় কনজারভেটিভ পার্টির সাথে খুব বেশি পার্থক্য নেই লেবার পার্টির। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে কনজারভেটিভদের দক্ষতার প্রমাণ রয়েছে, যেখানে লেবার পার্টিকে অর্থনৈতিক নীতিতে কিছুটা দুর্বল ধরা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় লেবার পার্টিকে অনেক সমালোচনা মুখে পড়তে হয়েছিল।
যুক্তরাজ্য ডার্টফোর্ড কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সভাপতি ড. মনজুর শওকত বলেন, 'ইনফ্লুয়েশন যখন ১১ শতাংশের ওপর উঠে যায়, এখন এটা ২ শতাংশ। এবং অর্থনীতির শেষ ২ থেকে ৩ মাসের দেখলে দেখা যায় মাত্র অল্প পরিমাণ গ্রথ করেছে।'
১৪ বছর ধরে কনজারভেটিভ সরকারের নেতৃত্ব সংকট, উত্থান-পতন, নানা নাটকীয়তা আর অর্থনৈতিক মন্দায় বিপর্যস্ত ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ। তাই নতুন সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা অনেক। বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হাউজ অব কমন্সের নেতৃত্বে আসা আগামী সরকার কি পারবে জনগণের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসতে? নাকি আরও কঠিন হবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ?