রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের যোদ্ধা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সম্মুখসারিতে এখন সেনা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এমন আশঙ্কাজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সেনা সংকটের মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনী সমরাস্ত্র সংকট মোকাবিলা করছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সম্মুখসারি থেকে কিছুক্ষণের জন্যও সেনারা বিরতি নিতে পারছেন না। এমন অবস্থায় সেনাবাহিনী বলছে, রাশিয়ার আক্রমণ সামনে থেকে প্রতিহত করা সেনারা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে মনোবল হারাচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান হারানোর এমন সময় ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভালেরি জালুঝনিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ২০১৯ সাল থেকে তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর পর এটিই নেতৃত্বের পর্যায়ে বড় পরিবর্তন।
তার পরিবর্তে নিয়োগ পেয়েছেন জেন ওলেক্সান্ডার সিরস্কি। তবে জেলেনস্কি জানান, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও জালুঝনি সেনাবাহিনীতে থাকবেন। শুক্রবার থেকে নতুন সেনাপ্রধান দেশটির সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেবে। যদিও নিয়োগ পাওয়ার পরপরই জানা গেছে এই সেনাপ্রধানের পুরো পরিবার রাশিয়াতে থাকেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীতে জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন দরকার। জালুঝনির প্রতি কৃতজ্ঞতা। নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছি। যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে নতুন করে প্রস্তুত করতে হবে। নতুন দলের কাছে দায়িত্ব দিচ্ছি। জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি সবচেয়ে অভিজ্ঞ কমান্ডার। কিয়েভে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তিনিই গড়ে তুলেছিলেন। যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে কৃষ্ণসাগরে বিজয় পেয়েছি। নিজেদের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছি, কিন্তু লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি না। আমাদের সেনাবাহিনীতে পরিবর্তন দরকার ছিলো।'
সাবেক সেনাপ্রধান জালুঝনির জন্ম ইউক্রেনে হলেও নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান সিরস্কির জন্ম রাশিয়াতে। সাবেক সোভিয়েত এই কর্মকর্তা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর এই দেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সিরস্কি ভূমিকা রেখেছেন।
জেলেনস্কি তাকে ইউক্রেনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সেনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের এমন কঠিন সময় সেনাপ্রধানকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তে পরবর্তীতে জেলেনস্কি বিপাকে পড়তে পারেন। এই সেনাপ্রধান তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁড়াতে পারেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলেনস্কি এখন মিরাকলের প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধে ইউক্রেনের দুর্বলতা দেখে একের পর এক জ্বালাময়ী মন্তব্য করে যাচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যম আরটি জানায়, মার্কিন এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন আধুনিক ইউক্রেন একটি নকল রাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন যা সৃষ্টি করে গেছেন।
পুতিন সবসময় ইউক্রেনকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ন্যাটোতে হামলা করার কোন পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই। বিশ্বকে নতুন কোন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায় না। তবে ন্যাটো সদস্য কোন দেশ থেকে হামলা হলে রাশিয়া চুপ থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে রাশিয়া আর ইউক্রেন আরও ১০০ যুদ্ধবন্দি বিনিময় করেছে। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যস্থতা করছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ অব্যাহত আছে। যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সংকটের কারণে পশ্চিমাদের কাছে সমরাস্ত্রের জন্য রীতিমতো ভিক্ষা চাইছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।