রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের সুযোগ দিতে চায় না ইইউ

বিদেশে এখন
0

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউরোপের তোড়জোড় আর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া গড়িমসির মধ্যে আবারো সংঘাত বেড়েছে দুই পক্ষের। এমন অবস্থায় আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) জরুরি বৈঠক ডেকে ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কোন সুযোগ দেয়া যাবে না। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে সোমবার (২৪ মার্চ) সৌদি আরবে আবারও বৈঠকে বসছে রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে স্থায়ী কোনো সমাধান না আসায় পরমাণু কেন্দ্রের এই শহরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে, থেমে নেই ইউক্রেনও। কুরস্কের গ্যাস স্টেশনে হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। থেমে থেমে দুই দেশের মধ্যেই চলছে সংঘাত। বৃহস্পতিবার রুশ বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। যদিও, এসময় শতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে মস্কো।

এমন অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আবারো মনে করিয়ে দিলেন, পশ্চিমা সহায়তা কতটা জরুরি। জানালেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করবে রাশিয়া। লন্ডনে সামরিক বাহিনীর নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে তবেই দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধবিরতি সম্ভব। এসময় তিনি আরো বলেন, চুক্তি লঙ্ঘন করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে চুক্তিতে।

কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘যেকোনো চুক্তি পুতিনের জন্য ভঙ্গ করা কোন ব্যাপার না। এমন আগেও হয়েছে। আবারও হবে। তাই পুরো ইউরোপ আর ন্যাটোর নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ জরুরি। ইউক্রেনের নিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পরও কোন সমাধান আসেনি। কারণ এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা চলছে। এটা হতে দেয়া যাবে না।’

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া এখনও স্থায়ী কোন সমাধানে না আসায় রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাসেলসে এক বৈঠকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেতারা বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। অন্যদিকে জেলেনস্কি আবেদন জানান, যুদ্ধবিরতির জন্য কোনোভাবেই যেন মস্কোর ওপর চাপ কমানো না হয়।

বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হবে আগামী বৃহস্পতিবার। বলেন, ইউরোপের সেনারা যেন ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে পারে, সেই চেষ্টাও করা হবে।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সম্মেলন শুরু হবে, জেলেনস্কি থাকবেন। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য আলোচনা হবে। প্রয়োজনে ইউরোপের সেনাবাহিনী ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেবে। ইউরোপের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের আগামী ৫ বছরে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার জবাব হতাশাজনক। রাশিয়া যুদ্ধবিরতি চায় না।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির তুলনায় বিরল খনিজ চুক্তি নিয়ে বেশি ব্যস্ততা ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, দ্রুতই ইউক্রেনের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিরল খনিজ উত্তোলনে চুক্তি করছি। এরমধ্যে ইউক্রেনও আছে। রাশিয়া আর ইউক্রেন ইস্যুতে ফলপ্রসূ কাজ হচ্ছে। ইউক্রেনের বিরল খনিজ নিয়ে দ্রুত চুক্তিতে আসবো। পাশাপাশি দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি নিয়ে সম্মত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

তবে, যুদ্ধ বন্ধে দফায় দফায় আলোচনা হলেও এখনও আসেনি কোন সমাধান। এমন অবস্থায় আগামী সোমবার আবারো সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনায় বসবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোগুলোর তালিকা রাশিয়াকে দেয়া হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, জ্বালানি অবকাঠামো বেসরকারি মালিকানায় দেয়ার পরিকল্পনা নেই বলেও জানান জেলেনস্কি।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে উঠে পড়ে লাগলেও লাভ খুঁজছেন রাশিয়ার। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ইউরোপ পাচ্ছে না মার্কিন সামরিক সহায়তা। কোনোভাবে যদি ইউক্রেনে জয় পায় রাশিয়া, পুতিনের মনোযোগ সরে যাবে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে। স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আবারও সংকটে পড়বে ইউরোপ।

ইএ