করোনার হানায় ২০২০ সাল থেকে বিশ্ব বাণিজ্যে ভাটা শুরু। পরিস্থিতি আরও উত্তাল করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাবে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট মানুষ। এর থেকে রেহাই পায়নি ইউরোপ-আমেরিকাও। এমন টালমাটাল অবস্থার মাঝেই গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন- যা সংকট থেকে বিশ্বকে মুক্তির পথকে আরও উলটপালট করে দেয়। মোটকথা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনার আগুন বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুন করে হুমকিতে ফেলেছে।
কারণ ইয়েমেনের হুতিদের একের পর এক আক্রমণে লোহিত সাগর ছাড়াও অনিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের ধমনী সুয়েজ খাল।
সবচেয়ে বেশি বিপদে ইউরোপ ও এশিয়া। কারণ তাদের বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল। এরমধ্যে হুতিদের উপর মার্কিন হামলা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। আর এর জেরে গেরাকলে পড়েছে ইউরোপ। কারণ তীব্র শীতে জ্বালানি চাহিদা এখন তুঙ্গে- তখনই কমে গেছে সরবরাহ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত অক্টোবরেও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু তা এখন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। ইউক্রেনে অভিযানের জেরে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোয় বর্তমানে হিমশিম অবস্থায় ইউরোপ।
ইতালিয়ান অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল গ্রোস বলেন, 'আমি মনে করি ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই সংকট আরও বাড়বে। তাই এখন থেকেই ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাস্ফীতির দিকেও নজর দিতে হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, ' আগামী ৬ কিংবা ৯ মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনায় জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।'
লোহিত সাগরে হুতি আতঙ্কে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুধু ইউরোপই নয় এশিয়াসহ পুরো বিশ্বেই পড়েছে জ্বলন্ত উনুনে। কারণ বর্তমানে লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এড়িয়ে আফ্রিকা ঘুরে আনা-নেয়া করতে হচ্ছে জ্বালানিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। অতিরিক্ত ১০ দিনের বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় সরবরাহ খরচও লাগামছাড়া।
এদিকে তেহরানের উচ্চমূল্যের দাবিতে ইরানের সাথে চীনের তেল বাণিজ্যও স্থবির হয়ে পড়েছে। একইসময় মুদ্রার চ্যালেঞ্জ ও দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে ভারত। তবে পরিসংখান বলছে, গত বছর চীনে ১০ কোটি টন অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করেছে মস্কো; যা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় জ্বালানি তেল নির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে মন্দা হাওয়া প্রকোট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।