দিল্লির আইকনিক লাল কেল্লার কাছে সোমবারের বিস্ফোরণের তিন সপ্তাহ আগে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরের দৃশ্যপট। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎই দেখা যেতে শুরু করে পাকিস্তানভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদকে সমর্থন দেয়া পোস্টার। তদন্ত শুরু হলে একে একে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে যায় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ।
তবে শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেলো না রক্তপাত। শক্তিশালী বিস্ফোরণের ১২ ঘণ্টায় ঘটনাস্থলে বোমার কোনো উপকরণ না মিললেও, আত্মঘাতী হামলা ধরে নিয়ে হামলাকারী হিসেবে কাশ্মীরি চিকিৎসক- ৩৬ বছর বয়সী উমর মোহাম্মদের প্রতি সন্দেহের তীর দিল্লি পুলিশের। অভিযোগ- জইশ-ই-মোহাম্মদের সাথে জড়িত এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্য ছিলেন উমর। বলা হচ্ছে, বিস্ফোরিত সাদা রঙের হুন্দাই আই-টোয়েন্টি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজে। প্রকাশ করা হয়েছে তার ছবিও। ছিলেন হরিয়ানার ফরিদাবাদে আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে তার মা ও ভাইদের।
নিরাপত্তা ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের আগে দুপুর থেকে টানা তিন ঘণ্টা লাল কেল্লার কাছে গাড়িটি দাঁড়িয়ে ছিল, চালককেও এক মুহূর্তের জন্য গাড়ি থেকে বেরোতে দেখা যায়নি। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বিস্ফোরণের ঠিক আগে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনের ট্রাফিক সিগনালের দিকে চলতে শুরু করে গাড়িটি। বিস্ফোরণের আগের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে উমরের চেহারার আংশিক। গাড়িচালকের পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, বিস্ফোরণের আগে বেশ ক'বার হাতবদল হয়েছিল বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটি।
আরও পড়ুন:
এ ঘটনায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে আরও দুই কাশ্মীরি চিকিৎসকের ইতিহাস। বলা হচ্ছে, আদিল আহমেদ ও মুজাম্মিল শাকিল নামের দুই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন উমর। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আদিল আর মুজাম্মিলকেও। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের সাথে সোমবারের বিস্ফোরণের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ, বলছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি'র প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীনগরে পোস্টারের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আদিলকে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, গেলো কয়েকদিনে সাত সহযোগীকে গ্রেপ্তার ও দুই হাজার ৯শ' কেজি বিস্ফোরক জব্দের খবরে ফরিদাবাদ ছেড়ে পালান উমর। ফরিদাবাদের যে বাড়িতে থাকতেন সন্দেহভাজন চিকিৎসক, সেখানকারই দু'টি কক্ষ থেকে ২০টি টাইমবোমা, ২৪টি রিমোট কন্ট্রোল, একটি রাইফেল ও অর্ধশত গুলির পাশাপাশি বিস্ফোরক হিসেবে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলেও একই ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে।
দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও 'সন্ত্রাসী হামলা' বলেনি ভারতীয় প্রশাসন, যদিও সন্ত্রাস দমন আইনেই চলছে তদন্ত। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলছে, চিকিৎসকদের মতো উচ্চ শিক্ষিত পেশাজীবিরা যেভাবে উগ্রবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, তাতে আভাস মিলছে সদস্য নিয়োগে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মৌলিক পরিবর্তনের।





