গলছে হিমালয়, পরিণতি ভোগ করবে বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

আশঙ্কাজনকহারে গলছে হিমালয় আর মেরু অঞ্চলের হিমবাহগুলো। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অতিরিক্ত বরফ গলার পরিণতি ভোগ করবে বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ। সংকট তৈরি হবে সুপেয় পানি আর খাবারের। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নয় হাজার গিগাটন বরফ গলে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এই গতিতে বাড়তে থাকলে বন্যার কবলে পড়বে লাখ লাখ মানুষ।

পৃথিবীর আবাস ৮০০ কোটি মানুষের। এরমধ্যে ২০০ কোটিই ভবিষ্যতে পড়তে যাচ্ছে ভয়াবহ বিপদে। চরম খাদ্য আর সুপেয় পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এমনই এক আশঙ্কাজনক তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

ইউনেস্কোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় পৃথিবীর হিমবাহগুলো দ্রুতগতিতে গলছে। গেলো তিন বছরে যা রেকর্ড পরিমাণে গিয়ে ঠেকেছে। ১৯৭৫ থেকে এখন পর্যন্ত নয় হাজার গিগাটন বরফ হারিয়েছে হিমবাহগুলো। ফলশ্রুতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত বিপর্যয়, এমনটাই আশঙ্কা জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের।

ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটর সার্ভিসের পরিচালক মিশেল জেম্প বলেন, '২০২৪ সালেই ৪৫০ গিগাটন বরফ হারিয়েছি। চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরফ গলেছে এই বছর। প্রতিবছর বরফ গলার পরিমাণ বাড়ছে। যদি জার্মানির উদাহরণ দেই, তাহলে এই পরিমাণ জার্মানির ভূখণ্ডের সমান হবে।'

বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নে এই বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু বহু দেশের কৃষকরা কৃষিকাজের জন্য পানি পাবে না। ফলে, পর্বত এলাকাগুলোতে হিমবাহ গলে খাদ্য অনিশ্চয়তা তৈরি করবে ১০০ কোটি মানুষের। তাদের আশঙ্কা, পর্বত ঘেঁষে থাকা নিম্নাঞ্চলগুলোতে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ বন্যা।

মিশেল জেম্প বলেন, '২৫ মিলিমিটার সমুদ্রের পানি বেড়েছে। এক মিলিমিটার পানি বাড়লেই প্লাবিত হতে পারে দুই থেকে তিন লাখ জনগোষ্ঠী। এই শতকেই উধাও হয়ে যেতে পারে হিমালয়ের হিমবাহ। এরপর মেরু অঞ্চল গলবে। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পাঁচ লাখ মানুষ প্লাবিত হবে।'

শুধু পর্বতের পাদদেশে থাকা নিম্নাঞ্চল নয়, হিমবাহ গলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক উন্নত দেশও। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে খরা দেখা দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আফ্রিকা আর ইউরোপ। পূর্ব আফ্রিকা এরইমধ্যে ৮০ শতাংশ বরফ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ পুরো পৃথিবী হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল।

স্টিফান উহলেনব্রুক বলেন, 'সারাবিশ্বে প্রায় তিন লাখ হিমবাহ উধাও হয়ে গেছে। গ্রিনল্যান্ড আর অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলছে। ৭০ শতাংশ সুপেয় পানির মজুত সেখানে। বিশ্ব উষ্ণায়ন যদি আরও বাড়ে, সেক্ষেত্রে আরও বেশি মাত্রায় বরফ গলবে। পানির সরবরাহ, খাবারের নিরাপত্তা সবকিছুই হুমকিতে পড়বে।'

হিমবাহ গলার কারণে তুষারধসও এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্মাফ্রস্ট গলে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা মিথেন গ্যাস বের হয়ে আরও উষ্ণ করছে পৃথিবী। যদি কোনোভাবেই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, চলতি শতকেই গলে যাবে পৃথিবীর হিমবাহের অর্ধেক।

এসএস