ট্রেন ছিনতাইয়ে জড়িত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী কারা?

ট্রেন ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী কারা? | এখন টিভি
0

ট্রেন ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী কারা? পাকিস্তানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চলটি ঘিরে বিচ্ছিন্নতাবাদের উত্থানই বা কেন? এই প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত জানা যাবে।

আয়তনে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড়, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, অথচ দরিদ্রতম প্রদেশ বেলুচিস্তান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে স্থানীয়দের বিরোধের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েকশ' যাত্রীসহ ট্রেন ছিনতাই করে বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি।

আফগানিস্তান-ইরানের সাথে পাকিস্তানের অভিন্ন সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তৎপর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে প্রতিবেশী চীনের। অঞ্চলটিতে স্বর্ণ ও তামার খনি নিয়ন্ত্রণ করে চীন। বেলুচিস্তানের ওপর দিয়ে এক দশক আগে ছয় হাজার কোটি ডলারের ব্যয়বহুল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসি প্রকল্প চালু হলে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ সীমা ছাড়ায় বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের।

সিপিইসি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রে রয়েছে আরব সাগর উপকূলবর্তী গোয়াদর গভীর সমুদ্র বন্দর; যেখানে চীনা স্থাপনা লক্ষ্য করে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, হত্যা করেছে চীনা নাগরিকদেরও। বিশেষ করে গেলো কয়েকমাসে সহিংসতার মাত্রা ছাড়িয়েছে বেলুচিস্তানে।

বেলুচিস্তান থেকে নিয়মিত চলাচল করা ট্রেন জাফর এক্সপ্রেসও বহুবার হামলার শিকার হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রেললাইনের একটি অংশ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ায় গেলো বছরও দু'মাস বন্ধ ছিল ট্রেনটি। নভেম্বরে প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটার রেলস্টেশন ছাড়ার আগমূহুর্তে ট্রেনটিতে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ যায় নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩০ জনের।

গেলো জানুয়ারি মাসেও বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক পাক ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে প্রদেশটিতে দেড়শ'র বেশি হামলা হয়েছে যা আগের চেয়ে ১১৯ শতাংশ বেশি। সহিংসতা ঠেকাতে বেলুচিস্তান সরকার প্রদেশটিতে বড় ধরনের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার কথা জানালেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সারিন বলেন, 'যেভাবে এ হামলা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অহংকারে ধাক্কা লাগবে। ফলে সম্ভবত বেলুচদের বিরুদ্ধে এক ধরনের স্টিম রোলার সামরিক অভিযানের জন্য দাবি উঠবে, যা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহ, বা এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো দেখতে পাব।'

অঞ্চলটিতে সামরিক অভিযান চালানো হলেও, এতে বেশিরভাগ সময়ই হয়রানির শিকার হন নিরীহ বেলুচরা, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যাদের কোনো যোগসূত্রের প্রমাণ মেলেনি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার জেরেই বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তি বাড়ছে। ইসলামাবাদ অবশ্য বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থানের জন্য দায়ী করে প্রতিবেশী ভারত ও আফগানিস্তানকে। দেশ দু'টি চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় বলেও অভিযোগ ইসলামাবাদের।

এসএস