গ্রামের নাম কেকারিয়া। ভারতের মধ্যপ্রদেশের মধ্যাঞ্চলে ভোপালে অবস্থিত গ্রামটিতে দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে বিপাকে কৃষক থেকে শুরু করে প্রায় সব স্তরের মানুষ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'ইন্টারনেট তো এখানে আছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। জরুরি কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে যায়। ধরুন কৃষকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো সুবিধার জন্য আবেদন করতে চায় কিংবা কোনো তথ্য জানতে চায়, প্রায়ই তা করা যায় না।'
কেকারিয়া গ্রামের একজন বলেন, 'গ্রামাঞ্চলেও আরও ভালো সুবিধা থাকা উচিত। বাচ্চাদের যেন বাইরে গিয়ে বসে থাকতে না হয়, ঘরের ভেতরে বসেই যেন পড়াশোনা করতে পারে। আজকালকার শিশুদের তো বেশিরভাগ লেখাপড়া মোবাইলেই করতে হয়। সরকারও মোবাইল ফোনে পড়াশোনায় শিশুদের উৎসাহ দিচ্ছে।'
হালনাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যানের উন্মুক্ত, অনলাইন ডেটাবেজ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ২০২৪ সালের হিসাবে, ২২৪টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগের তালিকায় বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ অর্থনীতি ভারতের অবস্থান ৭২তম। দেশটিতে গড় ডাউনলোড স্পিড প্রতি সেকেন্ডে ৬৫ মেগাবাইটের কিছু বেশি। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, এমনকি ভারতের বড় বড় শহরেও, বিশেষ করে গণপরিবহণে ইন্টারনেট সংযোগ বেশ দুর্বল। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কনস্টিলেশন স্টারলিংক ভারতে যাত্রা শুরু করবে বলে আশাবাদী অনেকে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'পার্বত্য এলাকায়, গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগে অসংখ্য সমস্যা আছে। বিভিন্ন স্থানেও সংযোগ মেলে না। লোকাল ট্রেন, কিংবা যখন বাসে ভ্রমণ করি, নেটওয়ার্ক পাই না। সংযোগ বিঘ্নিত হয়। তাই আমাদের টেলিকম খাতে নতুন কিছু যুক্ত হলে তাকে স্বাগত জানাবো।'
একজন ভারতীয় নাগরিক বলেন, 'প্রতিযোগিতা বাড়া দরকার। কারণ একমাত্র প্রতিযোগিতা বাড়লেই আমাদের দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো সেবা দেবে।'
ভারতের বাজারে ইন্টারনেট সেবাদানে শীর্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স জিও, ভারতি এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া ইত্যাদি। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও বাজারে প্রবেশের পর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইউনিনরও। দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ কোটির বেশি, তথ্য দেশটির টেলিকম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের। গ্রামীণ ভারতে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
এমন বাস্তবতার মধ্যেই চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইলন মাস্কের সাথে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহাকাশ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তাদের মধ্যে আলাপ হয় ভারতে স্টারলিংকের প্রবেশ করা নিয়েও। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, শিগগিরই শুরু হবে স্টারলিংকের নতুন এ যাত্রা, অপেক্ষা শুধু চূড়ান্ত সরকারি অনুমোদনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বাজারে ইন্টারনেট পরিষেবায় ঘাটতি পূরণ হতে পারে স্টারলিংকের হাত ধরেই।
ভারতের অর্থনীতিবিদ অনীল জৈন বলেন, 'ভারতে ইন্টারনেট সংযোগের মান যে সন্তোষজনক পর্যায়েরও ধারে কাছে নেই, সেটা স্বীকার করতেই হবে। ইন্টারনেটের গতি, সহজলভ্যতা সবকিছুতেই সমস্যা রয়েছে। তাই এ খাতে উন্নতির জায়গা অনেক বিশাল।'
বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে সংযোগ বিস্তৃত স্টারলিংকের। জনসংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারতে প্রতিষ্ঠানটির বাজার ধরার চেষ্টাও বহুদিনের। কিন্তু স্যাটেলাইট তরঙ্গ কে কতটা পাবে, তা নিয়ে জিও'র সঙ্গে সম্প্রতি দ্বন্দ্বে জড়ায় স্টারলিংক।
টেলিযোগাযোগে সারা বিশ্বে অন্যতম বড় বাজার ভারত, দেশটিতে ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ছেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। জিও, এয়ারটেল, ভোডাফোন ইত্যাদির তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে ইন্টারনেট সবচেয়ে কম দামেও মেলে ভারতে। এ অবস্থায় মার্কিন স্টারলিংকের সম্ভাব্য প্রবেশের খবরে তোলপাড় ভারতের অভ্যন্তরীণ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট খাত।
অনীল জৈন বলেন, 'তৃতীয় পক্ষের জন্য সম্ভাবনার দ্বার তো খোলা আছেই। আমার ধারণা ইলন মাস্ক এ দেশে আসবেন এবং সহজেই এখানে জায়গা করে নেবেন।'
দ্রুততম সময়ে স্টারলিংকের নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকেও যুক্ত করতে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে ইলন মাস্ককে আমন্ত্রণ জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও।