ফিচার , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

কাঠমান্ডু উপাখ্যান: হিমালয় কন্যা, এ যেন ভয়ংকর সুন্দর!

হিমালয় কন্যা নেপাল, যার প্রতিটি পরতে পরতে কেবলই মুগ্ধতা আর স্নিগ্ধতার ছাপ। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান বলেই কিনা, প্রকৃতি দু’হাত ভরে দিয়েছে ছোট্ট এই দেশটিকে, সে উত্তর হয়তো সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।

মন্দিরের শহর খ্যাত রাজধানী কাঠমান্ডু নামতেই যেন এই তকমার সার্থকতা খুঁজে পেলাম। গগনচুম্বী পাহাড়ে ঘেরা কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেখা মিলল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিবমন্দিরগুলোর একটি, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া পশুপতি নাথ মন্দিরের। ২৪৬ হেক্টর জায়গার ওপর নির্মিত পশুপতি নাথে রয়েছে ছোট বড় পাঁচ শতাধিক মন্দির।

কাঠমান্ডুর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, তা হলো এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি। এক সুতোয় গাঁথা দুটি ধর্ম, হিন্দু ও বৌদ্ধ। শহরের অলিগলি যেদিকেই চোখ যায় দেখা মিলবে অসংখ্য ছোট বড় প্রাচীন মন্দির ও প্যাগোডা। গোটা রাজধানী যেন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রীতির অনন্য এক মেলবন্ধনের প্রতীক।

কাঠমান্ডুর আরেক ঐতিহাসিক নিদর্শন দরবার স্কয়ার, যা বসন্তপুর দরবার স্কয়ার নামেই বেশি পরিচিত। কাঠমান্ডু উপত্যকার তিনটি দরবার স্কয়ারের একটি এটি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই দরবার স্কয়ারে মল্ল রাজা ও শাহ রাজাদের কৃত্তি গাঁথা ও রাজবাড়ীর স্থাপত্যশৈলী যেন প্রাচীন কাঠমাণ্ডরই আরেক প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে একেকটি কাঠের কারুকাজ যেন নেপালি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।

দরবার স্কয়ারের মূল আকর্ষণ হনুমান ধোকা অর্থাৎ রাজাদের পুরোনো বাসভবন। রয়েছে ত্রিভুবন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও মুদ্রার সংগ্রহশালা। হনুমান ধোকায় আরো আছে বিশাল নেপালি ঘণ্টা ও বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য মন্দির।

এছাড়াও, নানা ধরনের বাহারি পণ্য ও শো পিসের দোকানপাটও বসে এই দরবার স্কয়ারে। যদিও, ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষত এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই দরবার স্কয়ার। ঘুরতে ঘুরতে খানিকটা চোখেও পড়লো ধ্বংসের ছাপ।

মায়াবী জাদুর এই শহরের আরেক মায়ার নাম থামেল। মূলত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ছোট্ট এই এলাকাটিই জনপ্রিয় টুরিস্ট হাব। কাঠমান্ডু এসেছেন, কিন্তু থামেল এর মায়ায় পড়েননি, এমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া ভার। সরু রাস্তার দু’পাশে শত শত হোটেল-রেস্টুরেন্ট আর স্যুভেনির শপ যেন কাঠ্মাণ্ডু, তথা গোটা নেপালেরই অন্যতম পরিচায়ক।

রাতের থামেল যেন আরো জাগ্রত। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই প্রকৃত রূপে ধরা দেয় এলাকাটি। রাত যত গভীর হতে থাকে, বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় ততই মুখর হতে থাকে থামেলের রাস্তাঘাট। শত শত পর্যটকের আনাগোনা, ব্যস্ত ক্যাফে-রেস্তোরাঁ কিংবা বারের লাইভ মিউজিক, বিমোহিত করবে যে কাউকে।

নেপালে আরো একটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো ভক্তপুর জেলায় অবস্থিত নাগরকোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আট হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত এই অঞ্চলটিকে স্বর্গের আরেক রূপ বললেও হয়ত ভুল হবে না, যার প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মুগ্ধতা আর স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ছাপ। পাহাড়ের কোলঘেঁষা আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নাগরকোট যাওয়ার পথে মনে হচ্ছিল স্বর্গের যাবার রাস্তা বুঝি এমনই হয়। হিমালয়ের সৌন্দর্য যেন আরও জাগ্রত এখানে।

কাঠমান্ডু উপত্যকার আরেক বিস্ময়ের নাম চন্দ্রগিরি পাহাড়। থানকোটে অবস্থিত এই পাহাড়ের চূড়ায় যেতে হলে আপনাকে চড়তে হবে ক্যাবল কারে। পাড়ি দিতে হবে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা। ভূমি থেকে এই ক্যাবল কারে করেই আপনি পৌঁছে যাবেন ৯ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত চন্দ্রগিরির চূড়ায়। আর এখান থেকেই দেখা মিলবে গোটা কাঠমান্ডু উপত্যকার অবিশ্বাস্য রূপ।

চন্দ্রগিরির চূড়ায় রয়েছে একটি প্রাচীন শিব মন্দির আর সেইসাথে অন্নপূর্ণা ভিউ পয়েন্ট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই দেখা মেলে অন্নপূর্ণার মনোমুগ্ধকর রূপ। চন্দ্রগিরির নান্দনিক রূপ যেন মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে, যেখানে জীবন বিনম্র, ধীর স্থির, জীবনধারা সাবলীল। যেন সত্যিই এক স্বর্গীয় এক অনুভূতি।

এএইচ