বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ ভারতে করপোরেট কালচার পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে তরুণ প্রজন্ম। বিশ্বের আর্থিক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার শাখা অফিস আছে দেশটিতে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, করপোরেট কালচারের চাপে পড়ে ভারতীয়দের লম্বা সময় বাড়তি চাপ নিয়ে অফিসেই কাটাতে হয়।
ভারতের পুনে শহরে শীর্ষস্থানীয় একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মের এক কর্মকর্তার মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় শুরু হয় গোটা দেশে। অতিরিক্ত কাজের চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি বেছে নেন আত্মহননের পথ।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং ইন্ডিয়ার এক কর্মী জানান, একটানা কাজের চাপে তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। তার মতো ভারতের করপোরেট জগতের আরো অনেক কর্মী একই অবস্থায় পড়েছেন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় কর্মক্ষেত্রে চাপ বাড়াটাই স্বাভাবিক বলে জানান এই পরিচালক।
ডিলয়েট সাউথ এশিয়া কমিউনিকেশনস ফার্মের পরিচালক নিধি বিক্রম চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের অর্থনীতি দুর্দান্ত গতিতে বাড়ছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির এমন একটি দেশে উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। ডিজিটাল যুগে প্রচুর কর্মশক্তির চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে কর্মক্ষেত্রে কখনো কখনো চাপ বাড়ছে।’
প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কর্মীদের জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে ভারতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের সুবিধা ছাড়াই দৈনিক ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করানো হয়।
দেশটির শ্রম আইন মতে, দৈনিক ৯ ঘণ্টা ও সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার সীমাবদ্ধ থাকলেও তা মানা হয় না। কর্মীরাও তাদের অধিকার ও আইনের ব্যাপারে সচেতন নয়। ভারতীয় এই আইনজীবীর মতে, পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় ভারতে কর্মক্ষেত্রে চাপ অনেকটাই বেশি।
বোম্বে হাইকোর্টের আইনজীবী হারপ্রীত সিং সালুজা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রের চাপ কেবল কাজের চাপই না। এটি হতে পারে কর্মীর মূল্যায়ন, প্রমোশন, উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পাওয়া। অনেক সময় কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। যা তার মানসিক চাপ তৈরি করে।’
এছাড়া নানামুখী চাপে কখনও কখনও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন অনেকে। যাদের আয়ের অন্য উৎস নেই তারা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরি করে যাচ্ছেন। এতে কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও অবসাদে ভুগছেন তারা।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কর্মীরা যখন বাড়িতে কাজ নিয়ে আসেন তখন তাদের পারিবারিক জীবনও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট আরতি আনন্দ বলেন, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপে বর্তমানে তরুণরা অনেক বেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজের জন্য সময় বের করতে পারছে না। এমনকি বাড়িতে বসে বা অবসর সময়ে কাজের ডেডলাইন নিয়েও চিন্তায় থাকে তারা। এটি একটি বড় সমস্যা। এতে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে।’
বসদের ভয়ে অনেক কর্মী প্রতিবাদ করতে ভয় পান। অন্যদিকে, বেকারত্বের হার বেশি থাকায় চাকরি হারানোর শঙ্কাও কাজ করে তাদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মচারীদের সুন্দর কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলার দায়িত্ব সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের।