জনতার রক্ষকই গুলি ছুঁড়ছে বিক্ষুব্ধ মানুষের দিকে। কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের লক্ষ্য করে আজ (মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর) পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও সংলগ্ন এলাকায় দিনভর চলে রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সহিংসতা।
এর আগে দু'দিনের যাত্রার পর পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। যাত্রা আটকাতে রাস্তায় রাস্তায় ফেলে রাখা শত শত বিশাল শিপিং কন্টেইনারের কঠিন ব্যারিকেড প্রবল জনজোয়ারে তাসের মতো ভেঙে পড়ে। যানবাহন, এমনকি পুলিশের গাড়িতেও আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা।
১৪৪ ধারা, পুলিশের গুলি-টিয়ার শেল উপেক্ষা করেই প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট ইত্যাদি অবস্থিত যে ডি-চকে, উচ্চ সুরক্ষিত সে এলাকার নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংবিধানের ২৪৫ ধারা জারির মাধ্যমে সেনা মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। এরই মধ্যে রেড জোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে চার হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে। রাজধানী কারফিউ জারির কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ইমরান খানের অবর্তমানে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ তথা পিটিআইয়ের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার স্ত্রী বুশরা বিবি। নির্বাচনে জালিয়াতি, অবৈধ ধরপাকড়, সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর বিরুদ্ধে এবং ইমরানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে দেশের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি এদিন রাজপথে দেখা যায় বুশরা বিবিকেও।
পাকিস্তানের সাবেক ফার্স্টলেডি বুশরা বিবি বলেন, 'ইমরান খানের নির্দেশে ২৪ নভেম্বর থেকে সারা দেশের মানুষ সকল বাধা উপেক্ষা করে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। যারা এখনও বের হননি, তারা নিজের জন্য এবং দেশ ও জাতির জন্য বের হোন, ইসলামাবাদ আসুন। কারণ এটা দেশের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়।'
ইচ্ছাকৃত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে পিটিআইয়ের সন্ত্রাসীরা, অভিযোগ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের। পিটিআই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললেও স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের অস্ত্রসহ ছবি প্রকাশে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা।
এদিকে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঠেকাতে ক'দিন ধরেই কর্তৃপক্ষ শিপিং কনটেইনার ফেলে রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাখায় প্রায় পূর্ণ লকডাউন পরিস্থিতিতে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে জ্বালানি সরবরাহে। ডিজেল-পেট্রোলসহ জ্বালানি সংকটের হুমকিতে দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম নগরী লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডি। চরম রাজনৈতিক অস্থিরতায় পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে সূচক হারিয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি।