আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে ভারতের মনিপুর রাজ্য। প্রাদেশিক রাজধানী ইম্ফালসহ কয়েক জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, এমনকটি কারফিউ দিয়েও আন্দোলন দমন করতে পারেনি প্রশাসন। নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চলছে সংঘাত, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর।
রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত জনতার দেয়া আল্টিমেটাম চলছে। দু'দিনের দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের বাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতার হামলার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ও গভর্নরের সরকারি বাসভবন এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।
স্থানীয় একজন বলেন, 'হাজার হাজার মানুষ এসে দরজা ভেঙে জোর করে বিধায়কের বাড়িতে ঢুকে যায়। হঠাৎ এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন সেখানকার দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তারা কথা বলার চেষ্টা করছিলেন সবার সাথেই। কিন্তু তারা কিছু শুনতে চায়নি। মানে ভাঙচুর করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছিল।'
জাতিগত সংঘাতে এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্থির ৩২ লাখ বাসিন্দার মনিপুর। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় আর কুকি আদিবাসীদের বিভক্তি চলতি সপ্তাহে সহিংস ও প্রাণঘাতী রূপ নেয় পুরো রাজ্যে। জিবরাম জেলায় কুকি বিদ্রোহীদের ১১ নভেম্বরের হামলার পর অপহৃত মেইতেই নারী-শিশুদের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মুখোমুখি দু'পক্ষ।
বছর পেরিয়েও রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার অভিযোগে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে গেছে মিত্র দল এনপিপি। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার বলে জোটে ভাঙনে বড় সমস্যায় না পড়লেও ব্যাপক ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে বিজেপি। এ অবস্থায় মহারাষ্ট্র-ঝাড়খান্ডে নির্বাচনী সভা বাতিল করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ভারতের মনিপুরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং বলেন, 'জাতি, বর্ণ, ধর্ম যাই হোক না কেন, কখনোই এমন হত্যাযজ্ঞ আশা করিনি। এক বছরের কমবয়সী শিশুও ছাড় পায়নি। নারীদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং রাজ্য সরকার, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের প্রতিনিধিত্ব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী, এমনকি বিরোধী দলের নেতাদের সাথেও কথা বলা।'
২০২৩ সালের মে মাস থেকে সংঘাতে রাজ্যটিতে প্রাণ গেছে কমপক্ষে আড়াইশ' মানুষের, বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহত ১০ জনের বেশি নারী ও শিশুর অনেকের মরদেহ মিলছে প্রতিবেশী রাজ্য আসামে। হামলাকারী কুকি বিদ্রোহীদের অনেকেই আসাম থেকে মনিপুরে গেছে বলে উত্তেজনার আঁচ পৌঁছেছে আসামেও।
নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে দফায় দফায় বৈঠক করছে আসাম রাইফেলস, মনিপুর পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বিএসএফসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবারও (১৮ নভেম্বর) শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা অমিত শাহ'র। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও মনিপুরে যাননি বলে নিন্দা জানিয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
ভারত কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, 'এরা নির্বাচনের প্রচারের জন্য এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ওদিকে মনিপুরে ধর্ষণ, মারামারি, হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া- এসব হচ্ছে। ওখানেও শিশুরা মরছে। আর এরা মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে ঘুরছে। দেশের লোকের প্রতি তাদের কোনো মায়া নেই। জনগণের সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় তাদের কাছে নেই।'
সাধারণ শ্রেণিভুক্ত মেইতেইরা কুকিদের মতো সুনির্দিষ্ট নৃগোষ্ঠী হিসেবে অন্তর্ভুক্তি চায়। যেখানে ভারতের মিজোরাম আর প্রতিবেশী মিয়ানমারের চিন প্রদেশের সাথে জাতিগত সম্পর্কভুক্ত কুকিরা চায় মনিপুর থেকে বের হয়ে আলাদা প্রশাসন।