পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সীমান্ত নজরদারি নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান হতে যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নতুন এই চুক্তি অনুযায়ী দু'দেশের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে আগের মতোই টহল কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন সীমান্তরক্ষীরা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কয়েক বছর ধরে চীন আর ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মধ্য দিয়ে চীন-ভারত সীমান্তের লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলে টহলের বিষয়ে সমঝোতায় এসেছে দুই পক্ষই।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুভ্রমনিয়াম জয়শঙ্কর। পরবর্তীতে এই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুভ্রমনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, 'অনেক এলাকা রয়েছে, ২০২০ সালের পর যেই এলাকাগুলোতে তারা আমাদের নিষিদ্ধ করেছে, আমরাও তাদের নিষিদ্ধ করেছি। এমন সমঝোতায় পৌঁছেছি, যেখানে ২০২০ সালেও টহল দিতে পারতাম, এখনও পারবো। ভারত-চীনের সম্পর্ক এই চুক্তির মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক হতে পারে। কূটনৈতিক সফলতা এটা।'
যদিও এই চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তে দুই দেশের মোতায়েন করা হাজার হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে কিনা তা নিশ্চিত করেনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলন শুরুর মাত্র একদিন আগেই সীমান্ত নজরদারি নিয়ে চুক্তির ঘোষণা আসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে।
নয়াদিল্লি বলছে, এই চুক্তি দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য জরুরি ছিল।
আর সাবেক রাষ্ট্রদূতরা বলছেন, এই চুক্তির পরও সীমান্তে সংঘাত কমবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। কেননা এর আগের কোনো চুক্তিই চীন রক্ষা করতে পারেনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক জয়শঙ্কর বলেন, 'চীনকে কি আসলে বিশ্বাস করা যায়? যদি আপনি অতীতে ফিরে যান, দেখবেন কোন চুক্তিই চীন রক্ষা করেনি। তার ওপর চীন এটাও কখনো পরিষ্কার করেনি কেন চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ভারত চীনকে অবাক করে দিয়েছে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে। এখন চীনকে কীভাবে বিশ্বাস করা যায় জানিনা । চূড়ান্ত চুক্তির সম্মান না করলে কিভাবে বিশ্বাস করা যায় কোন দেশকে ।'
লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম দুই দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে ৩ হাজার ৪শ' ৮৮ কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত এলাকা। চীন বরাবরই কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। এই সীমান্ত ভারত অধিকৃত পূর্ব লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশকে চীন থেকে আলাদা করার পাশাপাশি বেইজিংয়ের নিজেদের বলে দাবি করা গোটা তিব্বতকে ভারত থেকে আলাদা করেছে। নদী, লেক আর হিমালয়ে বিস্তৃত এই এলাকায় কিছুদিন পরপরই উত্তেজনা দেখা দেয়। সীমান্তে অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়েও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যেই।
২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তের গালওয়ান ভ্যালিতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই সীমান্তের লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি'তে আর্টিলারি, যুদ্ধযান ও যুদ্ধবিমানসহ সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এরপর ২০২১ সালে সিকিম সীমান্তে আর ২০২২ সালে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং শহরে আবারও দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সীমান্তে সংঘাতের ঘটনা দুই দেশের জন্য নতুন নয়। ১৯৬২ সালেও সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকা ছাড়াও লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে রয়েছে বিতর্কিত আরও চার এলাকা। এরমধ্যে ডেমচকের পশ্চিমাঞ্চল ভারতের দখলে, পূর্বাঞ্চল দখলে চীনের। প্যানগং লেক এলাকার ৫০ শতাংশই তিব্বতের নিয়ন্ত্রণে, ৪০ শতাংশ পড়েছে লাদাখের দখলে, ১০ শতাংশ এখনও বিতর্কিত। গগরার হট স্প্রিং এলাকাটি কৌশলগত অবস্থানের কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে আকসাই চীনকে নজরদারিতে রাখে ভারতের সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে আকসাই চিনে অবস্থিত হওয়ায় দেপসাংও বিতর্কিত