হিজবুল্লাহ সদস্যদের সঙ্গে চলমান সংঘাত উত্তেজনায় সাধারণ লেবানিজদের টার্গেট করছে ইসরাইল। আগ্রাসী বিমান হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে ভারি হয়ে উঠছে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে আহত রোগীর সংখ্যা। এতো রক্ত ঝড়ার পড়েও চোখে-মুখে বিন্দুমাত্র আতঙ্কের ছাপ নেই লেবানিজদের।
আহত সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করা প্রিয়জনরা বলছেন, এভাবে আগ্রাসন চালিয়ে লেবাননবাসীদের দমাতে পারবে না ইসরাইল। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো কাছেই আত্মসমর্পণ করবেন না তারা। এমনকি ইসরাইল যত বেশি রক্ত ঝরাবে নিজেরা তত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন এক আহত তরুণের মা।
এক আহত তরুণের মা জানান, ইসরাইল যদি মনে করে এভাবে রক্ত ঝড়িয়ে আমাদের ভয় দেখাতে, তাহলে তারা ভুল করছে। উল্টো, এতে আমরা আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছি। তারা প্রাণঘাতি হামলা চালিয়ে আমাদের থামাতে পারবে না। শিগগিরই আমাদের বিজয় আসবে।
গাজায় আগ্রাসনের জেরে ১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাত উত্তেজনা বর্তমানে চরম পর্যায় পৌঁছালেও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই বলেও কঠোর বার্তা দিলেন লেবাননবসী। ইসরাইলকে উচিত শিক্ষা দিতে হাজার হাজার যোদ্ধা প্রস্তুত কঠোর হুঁশিয়ারি দেন সাধারণ লেবানিজরা।
লেবানিজদের মধ্যে একজন জানান, আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হামলার ঘটনা আমাদের আরও দৃঢ় করে তুলছে। আমাদের মনোবল আরও বাড়ছে। আমরা পিছু হটবো না। যত বিপদই আসুক আমরা গাজাবাসীর পাশে আছি।
লেবানিজদের মধ্যে আরো একজন জানান, গাজার প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকায় ইসরাইল লেবাননেও পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পাঁয়তারা করছে। আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছে। আমাদের হাজার হাজার যোদ্ধারাও তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
মঙ্গল ও বুধবার ডিভাইস বিস্ফোরণসহ ইসরাইলি বিমান হামলায় আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মিত্র দেশ থেকে চিকিৎসা সহায়তা আসছে বলে নিশ্চিত করেছেন লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাই ইসরাইল যতই হামলা চালাক, সক্ষমতায় কোনো সংকট হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
লেবানন সিডন সরকারি হাসপাতালের পরিচালক আহমেদ আল-সামাদি বলেন, ‘মঙ্গলবার এবং বুধবারের ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার গতি বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সব চিকিৎসা, নার্স এবং প্রশাসনিক কর্মীরা এক হয়ে কাজ করছি। আশা করি পরিস্থিতি আরও খারাপ হলেও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।’
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে লেবাননের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সক্ষমতা রয়েছে। আমরা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশবিদেশের সব পর্যায়ে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। সবাই সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে চিকিৎসা সহায়তা এসেছে।’
এদিকে বৈরুতসহ লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণঘাতি বিমান হামলায় নিহতদের সমাধি আয়োজনেও শ্লোগানে শ্লোগানে ইসরাইলকে কঠোর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হিজবুল্লাহ সদস্যরাও। তবে ইসরাইল দাবি করছে, তাদের হামলা কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলসহ বেশ কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারানোয় হিজবুল্লাহর সামরিক চেইন অব কমান্ড সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সুতরাং, তাদের কেনো হুংকারে ভয় পায় না তারা।