হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শ্যামবাজার। ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা জুড়ে আলোর মিছিল দেখলো কলকাতাবাসী। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে মশালের আলোতে জেগে রইলো তিলোত্তমা কলকাতা। নির্যাতিতা বিচার পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিবাদের এই আগুন নিভবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন আন্দোলনকারীরা।
মিছিলটি শেষ হয়েছে শ্যামবাজারে নেতাজি সুভাষ বোসের ভাস্কর্যের সামনে। সেখান থেকে মশাল তুলে দেয়া হয়, নির্যাতিতার পরিবারের হাতে।
এর আগে, টানা ৪২ ধরে চলমান আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করে জুনিয়র ডাক্তার ফোরাম। তুলে নেয়া হয় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ১১ দিন ধরে চলমান অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিও।
তবে রাজ্যের পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে চাপে রাখার সিদ্ধান্তে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। হত্যা ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত শুক্রবার মিছিল করেন তারা। মিছিলকারীরা জানান, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়। মানুষের মনের ভেতর থেকেই প্রতিবাদটা এসেছে।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ইমার্জেন্সি বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। এদিন সকালে আরজি কর হাসপাতালে যে-সব জুনিয়র ডাক্তারের ডিউটি ছিল, ইতোমধ্যেই তারা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ভবনে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
কর্মক্ষেত্রে ফিরলেও হাসপাতালে ভয়ভীতি দেখানোর যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসকরা। যে পাঁচ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করেছিলেন ডাক্তাররা।
তার জেরে প্রথমে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে, পরে নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে আলোচনায় বসে চিকিৎসক ফোরাম। দু'দফা বৈঠকের পর হাসপাতালে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত দিকগুলো সংস্কারের বিষয়ে রাজ্য সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিলেও সম্পূর্ণ আশঙ্কামুক্ত নন ডাক্তাররা।
অন্যদিকে, আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। ২৮৮ পাতার আরটিআই-এর কপি, অভিযোগপত্র, ৭৩০ পাতার টেন্ডার সংক্রান্ত নথিসহ আরও কিছু আলামত উদ্ধার করেছে সিবিআই। সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে এই সরকারি ই-টেন্ডারের কপি পাঠিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে ফেরানোর চ্যালেঞ্জে আপাতত উতরে গেছে রাজ্য সরকার। পরিবর্তে অব্যাহতি দিতে হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সচিব, পুলিশ কমিশনার ও ডিসি নর্থকে।
স্বাস্থ্য বিভাগে রদবদলের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, দিন শেষে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে, নতুন করে আর কী করবেন মমতা- সেদিকেই এখন নজর গোটা ভারতের।