এশিয়া
বিদেশে এখন
0

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে পুরোদমে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল

লেবাননে পেজার আর ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ৩৭ জনের মৃত্যুর পর এবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে পুরোদমে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম এতো বড় পরিসরে লেবাননে হামলা চালালো তেল আবিব। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, যোগাযোগ যন্ত্রে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সব সীমা অতিক্রম করেছে ইসরাইল। এদিকে বারবার ইসরাইল-লেবানন যুদ্ধবিরতির আহ্বান আসছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে দফায় দফায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। তেল আবিবের দাবি, হিজবুল্লাহ'র অস্ত্রের গুদামে যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়ে শতাধিক রকেট লঞ্চার ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। পাল্টা রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লেবাননও। ইসরাইল-লেবানন সংঘাতে ক্রমশ বাড়ছে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।

ওয়াশিংটন বলছে, গাজার পাশাপাশি, লেবানন-ইসরাইল, এমনকি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটের কূটনৈতিক সমাধান জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝুঁকিতে সব ব্রিটিশ নাগরিককে লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লেবানন কখনোই যুদ্ধের ভয়ে থাকতে পারে না উল্লেখ কর যেকোন ধরনের সংঘাত এড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কেরিন জিন পিয়েরে বলেন, 'ইসরাইলের নিরাপত্তা দিতে হবে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। এখনও বিশ্বাস করি, সমঝোতা সম্ভব। কূটনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে। এই অঞ্চলকে শান্ত করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। হোয়াইট হাউজ চেষ্টা করছে। কূটনীতি এখানে একমাত্র সমাধান।'

এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি থাকবে আগের মতোই।

পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোন রণতরী সরছে না। তার কারণ যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। কিন্তু এই সংঘাত নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। এই আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন, যেটার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে আমাদের সেনা সক্ষমতা রয়েছে। রাত দিন কাজ করছে সবাই যেন সংঘাত এড়ানো যায় ।'

এদিকে লেবাননে পরপর দুদিন পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরাইলকে সরাসরি দায়ী করে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, এক মিনিটে ৪ হাজার মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিলো ইসরাইল। এই হামলার মধ্য দিয়ে তেল আবিব সব সীমা অতিক্রম করেছে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, 'তারা জানতো, এখানে ৪ হাজারের বেশি ডিভাইস আছে। তারা একসঙ্গে ৪ হাজার মানুষ মারতে চেয়েছিলো। ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের সেনাদের সঙ্গে পুরো অঞ্চল এখন সংঘাতে জড়াবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাপ্রধানকে বলতে চাই, উত্তরাঞ্চলে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না ।'

এই ঘটনার পর স্তব্ধ হয়ে গেলেও মনোবল হারায়নি লেবাননের সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, ইসরাইলকে ভয় পায় না লেবানন। তেল আবিবের কাছে কোনভাবেই পরাজয় স্বীকার করবেন না বলেও জানান তারা।

লেবাননের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন 'যুদ্ধবিমান আমাদের জন্য খুব সাধারণ বিষয় । জন্ম থেকে এসব দেখছি। এখন এগুলো আমাদের জন্য সাধারণ বিষয়।'

আরো একজন বলেন, 'নাসরাল্লাহ'র বক্তব্যে আমরা ভরসা পাচ্ছি। অনেকেই লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চেয়েছে কিন্তু কেউ পারেনি।'

এমন অবস্থায় সরাসরি এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও ইসরাইল বারবারই হুমকি দিচ্ছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ'কে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, যুদ্ধ এখন নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। হিজবুল্লাহ'কে চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।