ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনে যেখানে নিজেরই বেঁচে থাকা দায়, সেখানে ১৫ মাস নিজের পরিবার আর পোষা বিড়ালটিকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন হালা। তিনি বলেন, 'শুধু মানুষ হয়, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নৃসংশতা থেকে বাদ যায়নি সদ্য জন্ম নেয়া শিশু আর অবলা প্রাণিরাও।'
আগ্রাসনের শুরুতেই সামরিক অভিযানের জন্য সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উত্তর থেকে দক্ষিণে পাঠানো হয়। উত্তরে চলে আইডিএফের হামাসবিরোধী অভিযান। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের কয়েকদিন পর ইসরাইল অনুমতি দিলে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে নেমেছে ফিলিস্তিনিদের ঢল। বেশিরভাগই গাড়ির অপেক্ষা না করে রওনা দিয়েছেন পায়ে হেঁটেই। ড্রোনে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, গাজার উপখূল ঘেষে হাটঁছেন হাজার হাজার মানুষ। ভয়, আশ্রয় নেবেন কোথায়?
ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘উত্তর থেকে দক্ষিণে পালিয়ে এসেছিলাম, এখন দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাচ্ছি। আমার ঘরবাড়ি শেষ, তাবু টেনে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ আশ্রয় নেয়ার কোন জায়গা নেই।’
এদিকে, এক বছর পর দক্ষিণ থেকে উত্তরে ফিরে পরিবারের সদস্যদের দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। প্রিয়জনের মুখ আর দেখা হবে কিনা, তা নিয়ে ছিল সংশয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত, উত্তর গাজা থেকে বাস্ত্যুচ্যুত হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। ধ্বংসস্তুপ হলেও নিজের শহরে ফিরতে পারার উচ্ছাস ছাপিয়ে যাচ্ছে দেড় বছরের দুঃখ কষ্টকে।
আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘মনে হচ্ছিলো বেঁচে নেই, গাজা শহরে ফিরলেও প্রাণ ফিরে পাবো। নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে, যেখানে জন্ম হয়েছে সেখানে ফিরবো। এটাই তো চেয়েছিলাম। আমার বাচ্চারা জানে না নিজের বাড়ি কি?’
ধ্বংসস্তুপ উত্তর গাজা উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে গেছেন ৩ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজাবাসী এতো কষ্ট করে নিজ ভূখণ্ডে থাকার যুদ্ধ করে গেলেও নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো বলেছেন, মিশর আর জর্ডানকে অনুরোধ করবেন, ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জর্ডানের রাজার সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর।
এদিকে, গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হলেও পশ্চিমতীরে আগ্রাসন বাড়ছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর। পূর্ব জেরুজালেম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। এরমধ্যেই আগামী সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ওয়াশিংটন যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে খুব দ্রুতই নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
মানবেতর এই পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার পর সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিক করছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। এই সংস্থা কয়েক দশক ধরে স্কুল আর হাসপাতাল পরিচালনা করছিলো। জেরুজালেমে থাকা হাজারো ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্য কাজ করতো এই সংস্থা। পশ্চিম তীর আর গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।