সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘাত আর হতাহতের ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে টানা পাঁচ দিনের কারফিউ জারি করা হলেও কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেই রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছেন বিষ্ণুপুরের শিক্ষার্থীরা। এসময় মণিপুর থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করে সংঘাত নিরসনে উপ কমিশনারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, 'দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে এই বিক্ষোভ। ভারতে এই ধরনের যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা বন্ধ করুন। ১৫ মাস হয়ে গেছে, ভারত কিছুই করছে না।'
বিক্ষোভ হলেও মণিপুরের অন্যান্য স্থানে কারফিউর কারণে থমথমে পরিস্থিতি। কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহিংসতা আর রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃতীয় দিনের মতো তিন জেলা ইমফাল ইস্ট, ইমফাল ওয়েস্ট আর থৌবালে চলছে কারফিউ।
পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করলেও বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চালু করা হয়েছে ব্রডব্যান্ড সেবা।
এদিকে মণিপুর সংঘাতে কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করা অস্ত্র ঘিরে ঘটনা নিচ্ছে নতুন মোড়। গেলো ৬ সেপ্টেম্বর কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছোড়া ৯ ফুট উচ্চতার প্রায় ২৪ কেজি ওজনের রকেট পাহাড়ের ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনার পরই মূলত নতুন করে শুরু হয় সংঘাত।
এতোদিন ধরে সংঘাত চললেও এই প্রথম ড্রোন আর রকেট হামলা চালায় কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মণিপুর পুলিশ বলছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করায় বেড়েছে সহিংসতার তীব্রতা ও হতাহতের সংখ্যা। এই রকেটগুলো থেকে বোমা ছোড়া যায়, রকেটগুলো ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। অত্যাধুনিক এই সমরাস্ত্রের ব্যবহারে হতবাক প্রশাসন। নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, মিয়ানমার থেকে আসতে পারে এই অস্ত্র।
মণিপুরের সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, এই রকেটগুলোর দুটি অংশ থাকে, একটি বিস্ফোরক, অন্যটি চালকযন্ত্র। জি আই পাইপ বা লোহার একটি টিউব ব্যবহার করা হয়, যার ভেতরে থাকে বোমার অ্যমোনিয়াম নাইট্রেট। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র অধিদপ্তর থেকে সব নিরাপত্তা বাহিনীকে এই রকেট নিয়ে সাবধান করা হলেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ সামরিক কর্মকর্তাদের। সেনা কর্মকর্তারা জানান, গেলো ১০ দিনে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার কয়েকটি এলাকা থেকে ছোড়া হয়েছে এই ড্রোনগুলো।
এদিকে, যে রকেট লঞ্চারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোও প্রযুক্তিগতভাবে বেশ আধুনিক। কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহৃত ড্রোন নিয়েও আতঙ্কে পুলিশ। পহেলা সেপ্টেম্বর মেইতেই সংখাগরিষ্ঠ ইমফাল ওয়েস্ট আর কুকি সংখ্যাগরিষ্ঠ কাংপকপি জেলার সীমান্তে ড্রোন থেকে শক্তিশালী ৩০ থেকে ৪০ টি বোমা ফেলা হয়েছে, একটি ধাতব শেলের বোমা, অন্যটি প্লাস্টিক শেলের। ধারণা করা হচ্ছে, ড্রোনের যন্ত্রাংশ অনলাইনে অর্ডার করে এখানে সংযোজন করা হয়।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিগত দ্বন্দ্বে মণিপুর পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে। পাহাড়ি এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে শরণার্থী শিবিরে। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরের কুকি আর মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হয় সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে জাতিগত সংঘাত। যা দমনে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার।