ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্য নৈসর্গিক শোভা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে এই সেভেন সিস্টার্সের মণিপুর রাজ্যে অব্যাহত সশস্ত্র আন্দোলন।
বিগত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠী নিজেদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করে যাচ্ছে। মণিপুরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায় কুকিদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ শুরু হয় ২০২৩ সালের মে মাসে।
গত দেড় বছরের সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৩ শতাধিক মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। মাঝখানে সহিংসতা কিছুটা কমলেও আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। গত কয়েক দিনে রকেট ও ড্রোন হামলায় উত্তপ্ত গোটা মণিপুর রাজ্য।
মণিপুরের অনেক অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জাতিগোষ্ঠী অঞ্চলে সক্রিয় আছে গ্রামরক্ষা কমিটি। এই কমিটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সুসজ্জিত গ্রামের সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত।
সম্প্রতি এদের সঙ্গেই সশস্ত্র জঙ্গিদের সংঘর্ষে প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে মণিপুর সরকার। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নাগা ও কুকি উপজাতির মানুষ।
এরকম আরও প্রায় ৩৩টি উপজাতির বসবাস এই মণিপুর রাজ্যে। এদের মধ্যে মেইতেই জনগোষ্ঠী সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দাবি জানায়।
রাজ্যের হাইকোর্ট তাদের দাবি-দাওয়া বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দিলে সংঘর্ষ দানা বাধতে শুরু করে অন্য গোষ্ঠীদের সঙ্গে।
এছাড়া, পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় রাজ্য সরকার। সেখানে বসবাসরত বেশিরভাগই ছিল কুকি জনগোষ্ঠী। ধীরে ধীরে জাতিগত এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে।
বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষের বসবাসের কারণে একসময় মণিপুর রাজ্যকে বলা হতো মিনি ইন্ডিয়া। জাতিগত বিভাজনের কারণে এখন তা ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার পথে।