২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায় জাপানের ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর তেজস্ক্রিয় পানি শোধন করে সমুদ্রে ফেলার জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে জাপান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার এসব তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়তে শুরু করে।
গত এক বছরে ৮ দফায় মোট ৬৩ হাজার টন তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছেড়েছে জাপান সরকার। এতে সামুদ্রিক খাবারে তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। হুমকির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক জীবনচক্র ও জীববৈচিত্র্য। জাপানের এক নাগরিক জানান, পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এছাড়াও উচ্চ তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত খাবার তাদের ওপর নানা ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেও জানান।
বছর না ঘুরতেই জাপান সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতায় নামে জাপানের বিভিন্ন মহল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। অবিলম্বে এ প্রক্রিয়া বন্ধে সরকারের কাছে দাবি জানায় জাপানি নাগরিক গোষ্ঠীগুলো। দেশব্যাপী দুই লাখেরও বেশি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে তারা।
জাপানের বিভিন্ন মহল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন বলেন, ‘সরকার নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করে এ ধরনের বিধ্বংসী প্রকল্প চালু রেখেছে। যা মানা যায় না।’
আরো একজন বলেন, ‘এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাছের মধ্যে মিশে যাবে এবং ধীরে ধীরে তা মানবদেহে জমা হবে। যার ফলে দেখা দিবে স্বাস্থ্যঝুঁকি।’
এদিকে চীনের অভিযোগ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করছে জাপান। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে তারা। আর তাই খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে ও জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে চীন।
এর জেরে গেল বছর জাপানের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির সামুদ্রিক খাবার রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার চীন। এতে, ধস নামে জাপানের কৃষি, বনজ ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যে। সংকট কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপে নতুন বাজার খুঁজছে জাপান।
জাপানের আইনজীবী সুগুও হিরোটা বলেন, ‘পারমাণবিক কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে সমুদ্র অর্থনীতি । সামুদ্রিক খাবার রপ্তানি বাণিজ্য কমে দেউলিয়া হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। প্রক্রিয়াটি নিরাপদ বলে দাবি করলেও, এতে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে ১৩ লাখ টনেরও বেশি দূষিত পানি জমা পড়েছে। যা প্রশান্ত মহাসাগরে অপসারণে সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ৩০ বছর।