ভ্রমণ , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

চীনে স্থানীয় পর্যটন চাঙ্গা, বিদেশি পর্যটকে মন্দা

পর্যটনের চাকা ঘুরতে শুরু করলেও চীনে এখনও চলছে বিদেশি পর্যটকের মন্দা। গেল এপ্রিলে দেশটিতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২০১৯ সালের মাত্র ৩০ শতাংশ। বৈশ্বিক রাজনীতির পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক টানতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রযুক্তি।

বৈশ্বিক অর্থনীতির ১৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ করে চীন। দেশটির অর্থনীতির ১১ শতাংশই নির্ভর করে পর্যটনের ওপর। কোভিড মহামারির পর ধাক্কা লাগে বেইজিংয়ের অর্থনীতিতে। মুখ থুবড়ে পড়ে পর্যটন খাত। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল চলতি বছরই হাওয়া লাগবে পর্যটনের পালে।

মহান শ্রমিক দিবস উপলক্ষে চীনজুড়ে ছিল ৫ দিনের জাতীয় ছুটি। দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, এ সময় প্রায় ৩০ কোটিবার ট্রিপ দেওয়া হয়েছে চীনজুড়ে। কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ভ্রমণের অধিকাংশই ছিল সড়কপথে। আকাশপথে ছিল সবচেয়ে কম।

তবে চীনা পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে অনেকটাই পিছিয়ে বিদেশি পর্যটক। পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের মাত্র ৩০ শতাংশ। ২০১৯ সালে দেশটি ভ্রমণে আসেন প্রায় ১০ কোটি ভিনদেশি পর্যটক। অথচ গেল বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৩ কোটি।

কেনো বাড়ছে না বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা? মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, সমাজ ব্যবস্থায় কমিউনিস্ট সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে চীন ভ্রমণে অনাগ্রহী পশ্চিমা পর্যটকরা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বেইজিং ভ্রমণের ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। যেমন চীন ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অন্যায়ভাবে আটকে রাখার ঝুঁকি থাকায় দেশটি ভ্রমণের আগে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন। একইভাবে অস্ট্রেলিয়া সরকার জারি করেছে উচ্চ মাত্রার সতর্কতা।

চীনের অন্যতম পর্যটন স্থান ডিফেং হল্যান্ড ফ্লাওয়ার পার্ক। ছবিৰ সংগ্রহিত

গেল বছর নভেম্বরে স্যান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে বৈঠক করেন মার্কিন ও চীনা সরকার প্রধান। সিদ্ধান্ত আসে দুই দেশের মধ্যে বাড়ানো হবে বিমান চলাচল, সহজ হবে ভিসা প্রক্রিয়া, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে গতিশীল করা হবে পর্যটন খাত।

তবে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ওয়াশিংটনের কর্মকাণ্ডে হতাশ বেইজিং। প্রতি সপ্তাহে চীনগামী বিমান চলাচল ৩৫ থেকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ এ। তবে মহামারির আগে এই সংখ্যা ছিল ১৫০। গেল মাসে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল করেছে প্রায় সাড়ে ৩০০ বার। ঠিক ৫ বছর আগের এপ্রিলে ১ হাজার ৫০০ বারের বেশি চলাচল করে বিমান।

চীনের এয়ারলাইন্সগুলো রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছাতে পারলেও মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে আছে নিষেধাজ্ঞা। তাই তুলনামূলক সস্তায় যাত্রী পরিবহনের সুবিধা পায় বেইজিংয়ের উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে বেইজিংগামী ফ্লাইট সংখ্যা না বাড়াতে মার্কিন এয়ারলাইন্সরা চাপ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসনকে। সরাসরি ফ্লাইট না থাকার পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় চীন ভ্রমণে অনীহা রয়েছে মার্কিন পর্যটকদের।

রাজনৈতিক ইস্যুর পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রযুক্তি। পেমেন্ট, বুকিং এমনকি লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের জন্য গুগলের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো চীনে নিষিদ্ধ। দেশটিতে ব্যবহার করা হয় মান্দারিন ভাষার অ্যাপ। ইংরেজির মতো আন্তর্জাতিক ভাষার সুবিধা অ্যাপগুলোয় না থাকায় অনেক সময় বিদেশি পর্যটকদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। তবুও চীনা বন্ধু কিংবা দোভাষীর সহায়তায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশটির সৌন্দর্য দেখতে ঘুরতে আসছেন অনেকে।

একজন পর্যটক বলেন, 'বাস্তবে এটি অনেক সুন্দর। আমি উপভোগ করেছি। পুরোনো ভবন আর পাহাড়গুলো খুব সুন্দর। এখানে আমার খুব ভালো লেগেছে।'

সমস্যাগুলো স্বীকার করে কাজ শুরু করেছে চীনা প্রশাসন। পশ্চিমাদের পাশাপাশি এশিয়ার পর্যটকদের টানতে চেষ্টা করছে বেইজিং। বর্তমানে বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারছেন চীনে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া আছে সাংহাইয়ের সব তিন তারকা হোটেলকে।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর