এশিয়া
বিদেশে এখন
0

নরেন্দ্র মোদির ১০ বছরে কতটা এগিয়েছে ভারত!

উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারপ্রান্তে নরেন্দ্র মোদি। তবে আসলেই কী উন্নয়ন হয়েছে ভারতে, হলেও বা কতটুকু?

রাত পোহালেই ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে দেশটিতে টানা ৩য় বারের মতো ক্ষমতায় আসার পথে অনেকটাই এগিয়ে নরেন্দ্র মোদি। এবার ৪শ’র বেশি আসনের প্রত্যাশা করছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

গেল ১০ বছরের শাসনামলে আসলে কতটা উন্নত হয়েছে ভারত, আর অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে কী কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ভবিষ্যৎ সরকারের সামনে? তারই তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ভারতের অর্থনীতির আকার প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর শীর্ষ জিডিপির তালিকায় চার ধাপ এগিয়েছে দেশটি। গেল কয়েকবছর ধরে নয়াদিল্লির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে উঠতে এই হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা চলমান রাখতে পারলে ২০২৭ সাল নাগাদ ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই হতে পারে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় উপরে থাকলেও মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের অবস্থান ১৪৭তম। ধনী-গরিবের আয়ের বৈষম্য পৌঁছেছে ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গুইদো কোজি জানান, আয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারলে ইকোনমিক সুপারপাওয়ার হওয়া কঠিন হবে ভারতের জন্য।

চীনেরও তিন দশক পর অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ভারতে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর দেশটির জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক। এতে ব্যবসার সম্ভাবনা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ বাড়ানোর জন্য অবকাঠামো খাতে চলতি বছরের বাজেটে ১৩৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়তে ২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ আধার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। বিজেপি সরকার প্রকল্পটির মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণমূলক উদ্যোগগুলোয় দুর্নীতি অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। অন্যদিকে ইউনিফাইড পেমেন্ট সিস্টেমের (ইউপিআই) ব্যবহারে শুধু কিউআর কোড স্ক্যানারের মাধ্যমে প্রতিদিন ভারতে লাখো কোটি রুপি লেনদেন হচ্ছে। এতে মাত্র ৬ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণ সম্ভব হয়েছে।

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা অনেকটাই দেখা যায় দেশটির পুঁজিবাজারে। ভারতে মূলত স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি- এনএসই ও বিএসই। গেল বছরে এক্সচেঞ্জ দুটিতে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত বাজার মূল্য ছাড়িয়ে গেছে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে ম্যাককোয়ারি ক্যাপিটালের প্রতিবেদন বলছে, পুঁজিবাজার দুটিতে খুচরা বিনিয়োগকারীদের মালিকানা মাত্র ৯ শতাংশ। অন্যদিকে প্রায় ২০ শতাংশ মালিকানা আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বিশ্লেষকদের ধারণা, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ্বে বাড়বে বিদেশিদের বিনিয়োগ।

ভারতের নাগরিকদের গড় বয়স মাত্র ২৯ বছর হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম কমবয়সী জনসংখ্যার দেশের স্বীকৃতি আছে। তবে বেকারত্বের দিক থেকেও ভারত রয়েছে প্রথম সারিতে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ সালে দেশটিতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিলো ৬.২ শতাংশ, যা বর্তমানে ১০ শতাংশে বেড়ে দাঁড়িয়েছে। স্নাতক সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এতে অর্থনীতির আকার বাড়লেও এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না বৃহৎ জনগোষ্ঠী।

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতায় চীন থেকে নিজেদের কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। যার সুযোগ এসেছে ভারতের ঝুলিতে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে মোদি সরকার। ১৪টি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা তহবিল খোলা হয়েছে। এতে অ্যাপল ডিভাইস প্রস্তুতকারক ফক্সকন ভারতে কারখানা খুলেছে। তালিকায় যোগ হতে পারে টেসলার নামও। অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে একে নরেন্দ্র মোদির কৌশলগত জয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর