বাণিজ্যিক উৎপাদনের তালিকায় থাকা ২৩টি কৃষিপণ্যের সবগুলোর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এমএসপি ধার্যসহ বিভিন্ন দাবিতে নয় দিন ধরে রাজপথে ভারতের কয়েক হাজার কৃষক।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা ভু্ট্টা, তুলা ও মসুরসহ তিন ধরনের ডাল পুরানো এমএসপিতেই কেনার প্রস্তাব দেয়। বাকি ১৮টি শস্য উপেক্ষা করে হাতেগোনা কয়েকটি শস্যে এমএসপি, তাও আগের মতো কম দামে, মানতে রাজি নন আন্দোলনরত কৃষকরা।
পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত থেকে দিল্লিতে পৌঁছাতে হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে কৃষকদর। তাদের ঠেকাতে শম্ভু, গাজিপুর, তিক্রি, নয়ডা, সিঙ্ঘুসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা চৌকিতে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ বাহিনী। ব্যারিকেড ভেঙে যাত্রা অব্যাহত রাখতে মঙ্গলবার থেকেই ক্রেন, ট্রাক্টরসহ ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে উপস্থিত কৃষকরাও।
পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির প্রেসিডেন্ট সুখবিন্দর সিং সাভ্রা বলেন, '২১ ফেব্রুয়ারি আবারও আন্দোলন শুরুর বার্তা পৌঁছেছে দেড় হাজারের বেশি কৃষকের কাছে। সবাই উপস্থিত থাকবেন। যেখানে রাতে তাঁবু খাটিয়ে থাকবেন, সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার জন্য জেনারেটর আছে। ভিড় সামলাতে নির্দেশনা দেয়ার জন্য স্পিকার আছে। চাল, ডাল, ময়দাসহ খাবার আর রান্নার জন্য স্টোভ আছে। তবে সরকার যেমনটা ভাবছে, আমাদের কাছে কোন অস্ত্র নেই।'
চার দফা আলোচনার পর সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন কৃষকরা। ঘোষিত 'ভারত বনধ্' কর্মসূচি আলোচনার সময় অবস্থান ধর্মঘটে সীমিত থাকলেও বুধবার ফের শুরু হচ্ছে রাজধানী ঘেরাওয়ে কৃষকদের 'দিল্লি চলো' যাত্রা।
জনসমাবেশ ঠেকাতে দিল্লি পুলিশ মাসব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা আমলে না নিয়ে দাবি আদায় পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় কৃষকরা। জানিয়েছেন অন্তত ছয় মাস রাজপথে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছেন তারা।
সুখবিন্দর সিং আরও বলেন, 'সরকারের সশস্ত্র বাহিনী আছে, শক্তি আছে। কিন্তু যাই হোক না কেন, কৃষকদের গ্রেপ্তার করা হোক, তাদের ওপর হামলা চালানো হোক বা নানারকম মামলা দায়ের করে তাদের জেলে ঢোকানো হোক। পুরো জাতির স্বার্থে এই বিক্ষোভ চলবে। দেশ বাঁচবে। আমরা দেশের জন্য পথে নেমেছি, নিজেদের জন্য নয়।'
নতুন এমএসপি নির্ধারণ ও আইনগত ভিত প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কৃষি ঋণে ছাড়, বিদ্যুৎ খরচ না বাড়ানো, শস্য বীমা চালু, ষাটোর্ধ্ব কৃষকদের জন্য মাসে মাথাপিছু ১০ হাজার রুপি পেনশন প্রদানসহ ২১ দফা দাবি আদায়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লির পথে যাত্রা শুরু করেন নারী-পুরুষসহ হাজার হাজার কৃষক।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এ আন্দোলনকে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে মোদি প্রশাসনের জন্য। ২০২০-২১ সালে কৃষকদের সহিংস আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকার।