সময় যতো গড়াচ্ছে, ততোই ঘোলাটে হচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯২টি আসনে জিতে চমক দেখিয়েছে। সরকার গড়তে দলীয়ভাবে সর্বোচ্চ আসন পাওয়া তিনটি দলের একটিরও সঙ্গে জোট বাঁধার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন কারাবন্দি পিটিআই প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ অবস্থায় তার দল সরকার গঠনের জন্য ন্যূনতম ১৩৪টি আসন থেকে অনেকটা দূরে থাকলেও জেলে বসেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ওমর আইয়ুব খানকে মনোনীত করেছেন ইমরান।
পাকিস্তান পিটিআই'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোহার আলী খান বলেন, 'দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ থেকে ওমর আইয়ুব খানকে মনোনয়ন দিয়েছেন ইমরান খান। আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রতিযোগিতায় থাকবেন ওমর আইয়ুব খান।'
১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের নাতি ৫৪ বছর বয়সী পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুব খান বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে কয়েকশ' মামলায় ইমরান খানসহ পিটিআই নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে অনেকের সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান ওমর আইয়ুব। আত্মগোপনে থেকেই ভোটে দাঁড়িয়ে নিজ আসনে জিতেছেন তিনি। এর আগে ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ এবং সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার দলেরও সদস্য ছিলেন ওমর।
পাকিস্তান পিটিআই'র মহাসচিব ও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান বলেন, 'পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমর্থিত প্রার্থীরা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের সক্ষমতা রাখে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রাদেশিক পর্যায়েও সরকার গঠন করতে পারবে। নির্বাচনী ফলে কোনো কারচুপি গ্রহণযোগ্য নয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।'
নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই। এর প্রতিবাদে শনিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি, এতে একাত্মতা জানিয়েছে জামিয়াত উলামা-ই-ইসলাম পাকিস্তান। রাষ্ট্রদ্রোহিতা থেকে শুরু করে দুর্নীতি পর্যন্ত অসংখ্য মামলায় ইমরান খানের দণ্ড ও তার দলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভোটের মাধ্যমে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে কোটি পাকিস্তানি। আর পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী পছন্দের প্রার্থী বলে নওয়াজকে জেতানোর জন্য ইমরান সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি পিটিআই নেতাদের। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিক জাফর হিলালি বলেন, ‘গোছানো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা কীভাবে দেখবো? এই জোট সরকার খুব বেশিদিন টিকবে বলে আমার মনে হয় না। সত্যি বলতে নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনের শুদ্ধতা নিয়ে যেভাবে প্রশ্ন উঠছে, তারপর যে সরকারই আসুক না কেন, তারা যে ভবিষ্যতে কখনো সুষ্ঠু বা সৎভাবে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করবে, এমন কোনো আশাই আমি দেখছি না।’
দল হিসেবে এগিয়ে থাকা আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পিএমএলএনও সরকার গঠনের জন্য ন্যূনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া পাকিস্তান পিপল'স পার্টির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা চালাচ্ছে। নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী না করার শর্তে পিএমএলএন আর পিপিপি জোট সরকার গঠনে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা জানালেও আসেনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ভোটের তিন সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার গঠনের ঘোষণা আসতে হবে।