এশিয়া
বিদেশে এখন
0

বিদ্রোহীদের হামলায় কোণঠাসা জান্তা বাহিনী

বিদ্রোহীদের সাঁড়াশি আক্রমণে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ষষ্ঠ শীর্ষ সামরিক শক্তি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর। জনবল কমায় প্রথমবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেনাবাহিনীতে তরুণ জনগোষ্ঠীর নিয়োগ। এদিকে উত্তেজনার মাঝেই ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন নিয়ে চলছে রাজ্য ও কেন্দ্রের দেখা দিয়েছে মতবিরোধ।

কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে শুরু করে উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোতে তীব্র লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে জান্তা ও বিদ্রোহী বাহিনীর সংঘাত। বিদ্রোহীদের হামলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৮শ' সদস্য পালিয়ে গেছে ভারত, চীন ও বাংলাদেশে। ভারত সরকার জান্তা সেনাদের ফেরত পাঠালেও মিয়ানমার সীমান্তে আস্তানা গেড়ে থাকা মনিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ। মনিপুর রাজ্য সরকারের অস্ত্রভাণ্ডার থেকে ছয় হাজার অস্ত্র চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় চড়ছে উত্তেজনার পারদ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মিয়ানমারের সঙ্গে ১৬শ' ৪৩ কিলোমিটার সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকদের অবাধ চলাচলের চুক্তি 'ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম' স্থগিত করে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হবে- সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তির মুখে এখনও কার্যকর হয়নি সে সিদ্ধান্ত। শনিবারও এ নিয়ে অমিত শাহ'র সঙ্গে বৈঠক করেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহাওমা।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেশি দেশে উদ্বেগ বাড়লেও সহিংসতা থামিয়ে সংকট সমাধানে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না জান্তা সরকারকে। উল্টো বিদ্রোহীদের হামলায় নাজেহাল হয়ে প্রথমবার কন্সক্রিপশন আইন জারি করেছে সামরিক জান্তা। শনিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর এ আইনের আওতায়, সেনাবাহিনী ডেকে পাঠালেই কমপক্ষে দুই বছর বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে। নিয়মভঙ্গে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ গুণতে হবে জরিমানা।

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে বাহিনী ত্যাগ করেছে ১৪ হাজারের বেশি সেনা, গেল সেপ্টেম্বরে এ তথ্য জানায় সামরিক সরকারবিরোধী শীর্ষ রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিটি গভমেন্ট।

একই মাসে স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টস সাপোর্টিং ডেমোক্রেসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে নিয়ন্ত্রণ দেশের ৫২ শতাংশ অঞ্চলে, লড়াই চলছে আরও ২৩ শতাংশ অঞ্চলে। বিপরীতে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছিল দেশের ৩৩৩টি প্রধান শহরের মাত্র ৭২টি এবং স্থলভাগের ১৭ শতাংশ অঞ্চল। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে আরাকান আর্মির নেতৃত্বে দেশজুড়ে দু'টি সংঘবদ্ধ আগ্রাসী অভিযানে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা একের পর এক সামরিক ঘাঁটিও দখল করতে শুরু করে। জান্তা সরকার ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করলেও নিউইয়র্ক টাইমসের ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে জানা যায়, ২১ হাজার সেনার প্রাণ গেছে সংঘাতে।

কমেছে সেনাবাহিনীর প্রতি মিয়ানমারের জনসাধারণের আগ্রহ। গেল বছর মাত্র ৮৩ জন নতুন সদস্য যোগ দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে, যা এক বছর আগেও ছিল এক হাজার। বর্তমানে তিন থেকে চার লাখ কর্মী নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

এসএসএস