হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ড: ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার পাবে সরকারি সহায়তা

হংকং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তার ঘোষণা
হংকং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তার ঘোষণা | ছবি: সংগৃহীত
0

হংকংয়ের একটি বহুতল পাবলিক হাউজিং কমপ্লেক্সে বুধবার (২৬ নভেম্বর) লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি বেড়ে ১২৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আহত ৭৬ জন এবং নিখোঁজ অনেকে। আজ (শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর) সকালে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে দমকলকর্মীরা। সংস্কারের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর তল্লাশি অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ডিভাইস। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার হংকং ডলার জরুরি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেছে হংকংয়ের ৮টি ভবনের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সের ৭টি সু-উচ্চ ভবন। প্রাণ গেছে বহু মানুষের। আহত হয়ে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও অনেকে। হতাহতের তালিকায় আছেন দমকলকর্মীরাও। সবকিছু তছনছ করে দিয়ে কেবল ধ্বংসাত্মক চিহ্ন রেখে গেছে আগুন।

এখনও নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে বহু মানুষ দিশেহারা। নিখোঁজদের জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে সে আসায় বুক বেধে আছেন স্বজনরা।

নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আশা করি নিখোঁজদের জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। দমকলকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সবার জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বাস করছি। আমার সহকর্মীকে খুঁজে পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।’

বুধবারের অগ্নিকাণ্ডের ২৮ ঘণ্টা পর গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর) বিকেলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭০০ এর বেশি দমকলকর্মীর চেষ্টা অব্যাহত ছিল। একইসঙ্গে চালানো হয়েছে উদ্ধার তৎপরতাও।

অবশেষে হংকংয়ের স্থানীয় সময় আজ (শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর) সকালে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার খবর দেয় দমকল বাহিনী। পুড়ে যাওয়া ভবনগুলো থেকে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

হংকং ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চান বলেন, ‘আগুনে পুড়ে উপরের তলাগুলো থেকে ধ্বংসাবশেষ এবং বাঁশের ভারা পড়ে যাচ্ছিল। ফলে আগুন নেভানোসহ ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে ঢুকে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে আমাদের সময় লেগেছে। এছাড়া বেশি তাপমাত্রা, ধোঁয়ার অন্ধকারের মতো অন্যান্য কারণও রয়েছে।’

আরও পড়ুন:

সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায়, আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের খোলা জায়গায়, স্কুল, কমিউনিটি হলে আশ্রয় নিয়ে দিন-রাত কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা। আগুন নিভলেও, দূর হয়নি আতঙ্ক।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রধানত অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ খুব কষ্টে। কারণ তাদের কাছে খুব বেশি টাকা নেই। এখন বাসস্থান খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। ভবিষ্যতে তাদের কী হবে তা আমি জানি না।’

আরেকজন বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ভয় হলো, এখনও ভবনে ফিরে যেতে না পারা। আমি কিছুটা অনিরাপদ বোধ করছি।’

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তায় ৩০০ মিলিয়ন হংকং ডলার বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জরুরি তহবিলের আওতায় ১০ হাজার হংকং ডলার পাবে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিক সাহায্য প্রদানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি আবাসন ইউনিটে ১০ হাজার হংকং ডলারের জরুরি তহবিল বিতরণ শুরু করব।

এদিকে সংস্কারের দায়িত্বে থাকা প্রেস্টিজ কনস্ট্রাকশন নামক প্রতিষ্ঠানটির ৩ জনকে গ্রেপ্তার ছাড়াও চালানো হয়েছে তল্লাশি অভিযান। জব্দ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথি, ১৪টি কম্পিউটার এবং তিনটি মোবাইল ফোন। দাহ্য বস্তু দিয়ে লিফটের জানালাগুলো ঢাকা এবং সংস্কার কাজ চলায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো বলে প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে।

জন লি বলেন, ‘হংকংজুড়ে বাঁশের মাচা দিয়ে সংস্কার কাজ বন্ধে সরকার কাজ শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বাঁশের পরিবর্তে ধাতুর ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে ভবন উন্নয়ন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেয়া হবে।

ওয়াং ফুক কোর্ট নামে এ আবাসিক কমপ্লেক্সটির প্রায় ২ হাজার ইউনিটে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বাসিন্দার বসবাস ছিল। ১৯৮৩ সালে নির্মিত ভবনগুলো সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প হিসেবে বেশ পরিচিত।

এসএইচ