তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-জাপানের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ‍ও চীনের প্রেসিডেন্ট
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ‍ও চীনের প্রেসিডেন্ট | ছবি: দ্য উইক
0

তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির চীন বিরোধী মন্তব্যের জেরে চিড় ধরেছে টোকিও বেইজিং বহুদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে। শুরু হয়েছে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ। জাপানের কাছ থেকে পণ্য আমদানিতে বিধি-নিষেধ, পর্যটনখাতে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্নক্ষেত্রে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চীনা সরকার। এতে করে তোপের মুখে পড়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

বহুবছর ধরেই পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ জাপান ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পারস্পরিক বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বেশ দৃঢ় অবস্থান বেইজিং ও টোকিওর। যুক্তরাষ্ট্রের পরই জাপানের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ চীন। ২০২৪ সালে জাপানের কাছ থেকে ১২৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য কিনেছে বেইজিং। অপরদিকে টোকিও ১৫২ বিলিয়ন মূল্যের চীনা পণ্য কিনেছে। যার বেশিরভাগই যানবাহনের যন্ত্রাংশ ও মেশিনারিজ।

এছাড়াও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক চীনা পর্যটক ঘুরতে যাওয়ার জন্য জাপানকে বেছে নেন। ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে চীন থেকে জাপানে যান ৭৫ লাখ পর্যটক। পর্যটক ছাড়াও পড়াশোনার জন্য চীনা নাগরিকদের অন্যতম পছন্দের দেশ জাপান।

দুই দেশের বহুদিন ধরে চলা মিত্রতার এ সম্পর্কে এবার চিড় ধরেছে। নভেম্বরের শুরুতে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি পার্লামেন্টে বিরোধীদলের প্রশ্নত্তরে তাইওয়ান নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করায় মূলত দেখা দিয়েছে বেইজিং ও টোকিওর সম্পর্কে টানাপোড়েন। তিনি বলেন, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে তবে আত্মরক্ষামূলক বাহিনী দিয়েও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে জাপান।

তাইওয়ান ঘেঁষা তাকাইচির এ ধরনের মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। খোদ জাপানের নাগরিকরাই বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তার। ক্ষমতা গ্রহণের এক মাসের মধ্যে তাকাইচির এ ধরনের মন্তব্যে কমেছে জনপ্রিয়তাও।

তাকাইচির এ মন্তব্যের জেরে এরইমধ্যে শুরু হয়েছে দু-দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ। টোকিও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বেইজিং। বাণিজ্যের লাগাম টানতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে চীনা সরকার। জাপানের পর্যটনখাত ধসিয়ে দিতে এরইমধ্যে দেশটির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং। জাপানগামী যাত্রীদের সেখানে না যেতে উৎসাহী করেছে তিনটি চীনা এয়ারলাইন্স। এক্ষেত্রে তাদের টিকিটে মূল্য ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদেরও জাপানে না যেতে হুঁশিয়ার করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন:

দু'দেশের বিরোধ এরইমধ্যে আঞ্চলিক সহিংসতার শঙ্কা বাড়িয়েছে। গেলো রোববার থেকে পূর্ব চীন সাগরের কয়েকটি দীপপুঞ্জে টহল দিচ্ছে চীনা কোস্টগার্ড। দু'দেশই যার মালিকানা দাবি করে। তবে চীনের এ উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক জলসীমা আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি জাপানের।

চীন-জাপানের বৈরি সম্পর্কের ছাপ পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও। গেলো সপ্তাহে জাপানের দুটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চীন। বন্ধ করেছ নির্ধারিত একাধিক গানের শো। এমনকি জাপানিজ সীফুড খাবারেও দিয়েছে বিধি-নিষেধ।

টোকিওর সঙ্গে কেবল বাণিজ্যিক সম্পর্কই ছিন্ন করছে বেইজিং তা নয়, এরইমধ্যে দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও বেশ অবনতি হয়েছে। গেলো সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অধিবেশনে জাপানকে এর স্থায়ী সদস্য হতে বাধা দিয়েছে দেশটি। জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে চাপে ফেলতেই চীনের এ কৌশল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

জাপানের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক স্টিফেন নাগি বলেন, ‘সানায়ে তাকাইচি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় চীন সমস্যায় পড়েছে। চীনের ধারণা, স্বল্প মেয়াদের জন্য তাকাইচি জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এরইমধ্যে তাকাইচি তার কূটনৈতিক দক্ষতা দেখিয়েছেন। আর তাই জাপানকে নানাভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে চীন।’

জাপানের বিভিন্ন মহল থেকে তাকাইচির এ মন্তব্যের জন্য চীনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হলেও, নিজের অবস্থানে বেশ অনড় জাপানের নতুন এই প্রধানমন্ত্রী।

সেজু