৩৪ বছর বয়সি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি চলতি মাসের শুরুতে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন। শহরের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে নয় পয়েন্ট ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি। শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে আসছিলেন মামদানি। যার মধ্যে অন্যতম ছিল অভিবাসন নীতি এবং গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের বিরোধীতা করা। সম্প্রতি মামদানি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্কে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
নির্বাচনের আগে একেবারেই অপরিচিত মুখ ছিলেন ভারতীয় বংশদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তান জোহরান মামদানি। উগান্ডা জন্ম নেয়া মামদানি ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এখন নিউ ইয়র্কের নগরপিতা তিনি। আগামী ১ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছেন মামদানি।
টানা কয়েকস সপ্তাহের পাল্টাপাল্টি বাক্য বিনিময়ের পর শুক্রবার হোয়াইট হাউজে মুখোমুখি হচ্ছেন ট্রাম্প ও মামদানি। এটিই ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান দুই নেতার প্রথম বৈঠক। গেল ১৯ নভেম্বর ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ট্রাম্প।
এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট মামদানিকে আবারও কমিউনিস্ট বলে কটাক্ষ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে তা বিস্তারিত জানাননি তিনি।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট বলেন, ‘একজন কমিউনিস্ট হোয়াইট হাউজে আসছেন। যাকে ডেমোক্র্যাট পার্টি দেশের বৃহত্তম শহরের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছে। বৈঠকটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কারও সঙ্গে দেখা করতে এবং কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। মার্কিন জনগণের পক্ষে যা সঠিক তা করার চেষ্টা করেন সবসময়।’
আরও পড়ুন:
বৈঠকের আগে মামদানি সাংবাদিকদের জানান, নিউ ইয়র্কের জননিরাপত্তা, জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো ট্রাম্পের সামনে তুলে ধরবেন। নিউ ইয়র্কবাসীর উপকারে আসে এমন সব ইস্যুতে সমর্থন জানানোর কথা বলেন তিনি। আর শহরবাসীর জন্য ক্ষতিকারক বিষয়গুলোর বিরোধিতা করার আশ্বাস দেন মামদানি।
নিউ ইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বলেন, ‘এটি নিউ ইয়র্কবাসীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের একটি বড় সুযোগ। তারা কি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে সে বিষয়ে জানানো হবে। নিউ ইয়র্কবাসীর প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। প্রতি পাঁচজনের একজন বাসে চড়ার জন্য প্রায় ৩ ডলার খরচ করেন। শহরবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো অন্যতম লক্ষ্য।’
এ সময় মামদানি আরও বলেন, লাখ লাখ নিউ ইয়র্কবাসীর তাকে যে কারণে নির্বাচিত করেছেন সে বিষয় নিয়েই তিনি কাজ করবেন। যার মধ্যে অন্যতম শহরবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো এবং ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
জোহরান মামদানি বলেন, ‘নিউ ইয়র্কের অভিবাসীদের রক্ষা করা শহরের মেয়র হিসেবে অন্যতম দায়িত্ব। ইমিগ্রেশন এনফোর্সেমন্টে বাহিনীর হাত থেকে তাদের রক্ষা করা। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই শহর আমার বাড়ি। আমাদের প্রত্যেক বাসিন্দার আবাস এটি।’
নিউ ইয়র্ক স্টেট কম্পট্রোলারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ অর্থবছরে নিউ ইয়র্ক সিটিকে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে মার্কিন ফেডারেল সরকার, যা শহরের মোট ব্যয়ের মাত্র ৬.৪ শতাংশ।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মেয়রের এ ধরনের বৈঠক স্বাভাবিক ঘটনা। তবে মামদানির পূর্বসূরি দুই মেয়র ওভাল অফিসে আলাদাভাবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেননি। তবে দুই মেরুর ব্যক্তিত্ব ট্রাম্প ও মামদানির বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই।





