দিল্লির বিস্ফোরণে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে দুই হাজার কাশ্মীরি শিক্ষার্থী

দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণ
দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণ | ছবি: সংগৃহীত
0

ভারতের দিল্লিতে বোমা হামলার হুমকির ঘটনায় খালি করে ফেলা হয়েছে কয়েকটি আদালত ও দু'টি স্কুল প্রাঙ্গণ। অন্যদিকে, গেলো সপ্তাহের বিস্ফোরণের ঘটনায় খড়গ নেমে এসেছে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের ওপর। ফরিদাবাদে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে দুই হাজার শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, দিল্লির বিস্ফোরণে কাশ্মীরে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে কীভাবে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনাকে স্বাভাবিক করে তুলছে ভারত সরকার।

১০ নভেম্বর নয়া দিল্লির ব্যস্ত সড়কে গাড়ি বিস্ফোরণের তিন দিন পর, কাশ্মীর উপত্যকায় সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীর বাড়ি উড়িয়ে দেয় ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী।

এখানেই শেষ নয়, গেলো সপ্তাহে রাজধানী দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় খড়গ নেমে এসেছে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের ওপর। হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখে দুই হাজার শিক্ষার্থী। অনুসন্ধান তীব্র হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে, যেখানে কর্মরত ছিলেন অভিযুক্ত চিকিৎসক উমর মোহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয়টির দিল্লি অফিসসহ ২৫টি এলাকায় বড় পরিসরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের লক্ষ্য, আর্থিক অনিয়মে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। প্রতারণা ও নথি জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও।

আরও পড়ুন:

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে বোমা হামলার হুমকির ঘটনায় খালি করে ফেলা হয় পাটিয়ালা হাউজ, সাকেত, রোহিনী ও তিস হাজারির আদালত চত্বর ও দু'টি স্কুল প্রাঙ্গণ। গুজব কি না জানা না গেলেও এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিছু খুঁজে পায়নি পুলিশ। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের নাম উল্লেখিত একটি ইমেইল আইডি থেকে দেয়া হয় হুমকির বার্তা।

এসব ঘটনায় যেন আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ৮শ' কিলোমিটার দূরের বাসিন্দারা। জম্মু-কাশ্মীর। ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল, যেখানে দেশের সর্বোচ্চ সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি রূপ নিয়েছে দীর্ঘ সামরিক অবরোধে। ২০১৯ সালে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার একতরফাভাবে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাধ্যতামূলক প্রস্তাব লঙ্ঘন করার পর থেকে কাশ্মীরি মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন কেবলই ঊর্ধ্বমুখী। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, নির্বিচার আটক-যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা আর ভয়ের শ্বাসরুদ্ধকর রাজনীতি অঞ্চলটিতে হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় শাসনের হাতিয়ার।

টার্কিশ সংবাদমাধ্যম টিআরটি'র এক মতামতধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে ভিন্নমত পোষণের ফলে এখন শুধু কারাদণ্ডই নয়, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের মতো কঠোর বিধিমালার আওতায় অপরাধ প্রমাণের আগেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে অভিযুক্তদের পারিবারিক বাড়িঘর; বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে পারিবারিক সম্পত্তি। স্থানীয় বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনের অনুসন্ধান বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ আইনের অধীনে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় অন্তত ১২শ' বেসামরিক বাড়িঘর।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, দিল্লির বিস্ফোরণে কাশ্মীরে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়াসহ সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নানা পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে ভারত সরকার স্বাভাবিক করে তুলছে কি না।

ইএ