কাতার, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গেল ১০ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যত শুরু হলেও, পরদিন থেকেই উপত্যকাটিতে হামলা চালাতে শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।
এরপর প্রতিনিয়ত গাজায় হামলা অব্যাহত রাখে নেতানিয়াহু বাহিনী। উপত্যকাটির সরকারি মিডিয়া অফিসের রিপোর্ট বলছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গেল এক মাসে ২৮২ বার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।
এরমধ্যে বেসমারিক নাগরিকদের ওপর ৮৮ বার, ইয়োলো লাইনের বাইরের আবাসিক এলাকায় ১২ বার, গাজা উপত্যকায় ১২৪ বার হামলা চালিয়েছে এছাড়া ৫২ বার ফিলিস্তিনিদের সম্পদের ওপর বিধ্বংসী সৃষ্টি করেছে। আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি ২৩ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ৩১ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। মাত্র ৬ দিন সহিংস কোনো হামলায়, মৃত্যু বা আহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক, আহত হয়েছে কয়েকশো বেসামরিক নাগরিক।
এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি হামলা ছিলো ১৯ অক্টোবর এবং ২৯ অক্টোবরের হামলা। ১৯ অক্টোবর রাফাহ শহরে দুই ইসরাইলি সেনা নিহতের ঘটনায় হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ তুলে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় তেল আবিব। এতে নিহত হয় ৪৫ ফিলিস্তিনি।
আর ২৯ অক্টোবর রাফায় বন্দুকযুদ্ধে আরও এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়। এরপরই বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে ৫২ শিশুসহ ১০৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে আইডিএফ। এছাড়াও হামাস জিম্মিদের মরদেহের পরিবর্তে ভুল মরদেহ হস্তান্তর করার পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ধীর প্রক্রিয়ায় মরদেহ হস্তান্তর করছে দাবি করে বার বার হামলা চালাচ্ছে তেল আবিব।
তবে, রাফাহ এলাকায় ইসরাইলি সৈন্য নিহতের ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড জানায়, ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন রাফাহ এলাকার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
যুদ্ধবিরতির পর ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, ২৪ জন ইসরায়েলি বন্দীর মৃতদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে হামাস, এখনও চারটি মরদেহ গাজায় রয়ে গেছে। গোষ্ঠীটি বলছে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অবশিষ্ট মৃতদেহগুলি উদ্ধারের জন্য ভারী খনন সরঞ্জামের প্রয়োজন। এদিকে, ইসরাইলের নিরবচ্ছিন্ন হামলার পরেও যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল আছে বলে দাবি করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে শুধু হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না নেতানিয়াহু বাহিনী। গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে তারা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার মাত্র অর্ধেক গাজায় পৌঁছাচ্ছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থাগুলির একটি জোট বলছে যে যুদ্ধবিরতির অধীনে সম্মত হওয়া খাদ্য সহায়তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ সহায়তা পাচ্ছে তারা।
গাজায় মানবিক সহায়তা পর্যবেক্ষণকারী ইউএন-২৭২০ মনিটরিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ড্যাশবোর্ডের মতে, ১০ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত, মাত্র ৩ হাজার ৪৫১টি ট্রাক গাজার অভ্যন্তরে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছেছে। ত্রাণবাহী ট্রাক চালকরা বলছে, ইসরাইলি বাহিনী দীর্ঘ সময় নিয়ে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোর তল্লাশি নেয়ায়, সাহায্য সরবরাহে দেরি হচ্ছে।
যদিও হোয়াইট হাউসের দাবি ১০ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক পণ্য এবং মানবিক ত্রাণ বহনকারী প্রায় ১৫ হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এই দাবি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে গাজাবাসী এবং ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলো।





